ক্যাম্পাস

তিনি আমার আদর্শ শিক্ষক

মাতা-পিতা সন্তানকে জন্ম দেন ঠিকই, কিন্তু সন্তানের পুনর্জন্ম হয় শিক্ষকের কাছে। জ্ঞানের পৃথিবীতে যার কাছে আমরা দ্বিতীয়বার জন্মগ্রহণ করি। যে ব্যক্তিত্বের পরশে জীবন হয়ে ওঠে সার্থক, সুন্দর, যিনি আমাদের মূল্যহীন জীবনকে করে তোলেন মূল্যবান, তিনি আর কেউ নন, তিনি শিক্ষক।

আমার ব্যক্তিগত জীবনে আমি অনেক শিক্ষকের সাহচর্য পেয়েছি। তাদের সকলের কাছে আমি ঋণী। জানি না, তাদের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবো কি না কখনো। তবে, যে শিক্ষক, যে ব্যক্তিত্ব আমার হৃদয় মন্দিরের একচ্ছত্র অধিপতি, তিনি হলেন মীরপুর মফিদ-ই-আম স্কুল অ‌্যান্ড কলেজের শিক্ষক বাবু অলক কুমার শীল। তিনি তেমন সুপরিচিত কেউ নন, এমনকি জগৎ জোড়া খ্যাতিও তার নেই। কিন্তু তার শিক্ষকতা, তার ব্যক্তিত্ব আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর মন জয় করে নিয়েছে।

অলক স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। ষষ্ঠ শ্রেণি অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই আমি তার সান্নিধ্যে আসি। স্বাভাবিক উচ্চতার, শ্যামল বর্ণের এবং বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী এই মানুষটির ব্যক্তিত্ব ছিলো অনন্য।

তিনি ছিলেন কথায় এবং কাজে অটুট। তার জীবনযাপনের মান ছিলো অন্যরকম। পোশাক পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন পরিপাটি। স্যারের কথা শুনলে মনে হতো তিনি জন্মেছেন সাহিত্যিক হতে। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠের আবৃত্তি যেকোনো হৃদয়কে আবেগপ্রবণ করে তুলতে যথেষ্ট ছিল।

তার পাঠদানের পদ্ধতি ছিলো চমৎকার। যেকোনো বিষয় শ্রেণিকক্ষে খুবই সহজ-সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতেন। লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন কঠোর, কিন্তু তার এই শাসন ছিলো সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার শাসন। শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে সুপরামর্শ পেত। বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের মন জয় করার এক অভাবনীয় শক্তি ছিলো তার মধ্যে।

স্যার ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং কর্তব্যনিষ্ঠ একজন মানুষ। প্রায় চার দশকের কর্মজীবনে তিনি তার দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন এবং করে আসছেন। তার সুবিশাল হৃদয় অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা করতেও সুযোগ জুগিয়েছে।

নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে যিনি আমাদেরকে উপকৃত করেছে, আমাদেরকে মানুষের মতো মানুষ বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, তিনি আমাদের অলক স্যার।

কখনো হয়তো কথাগুলো বলা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু আজ বলতে চাই। ভালোবাসি আপনাকে, আপনার ঋণ কখনই শোধ করতে পারবো না। আমি আজকে যে অবস্থানে আছি, তার পুরোটাতেই আপনার অবদান। আমি ধন্য আপনার মতো পথপ্রদর্শক পেয়ে। আপনার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জীবনে যেন সফলতা অর্জন করতে পারি, সেই আশীর্বাদ করবেন আমাকে। আমার হৃদয় আকাশের আদর্শের মূর্ত তারকা হয়ে আপনি সদা জাগ্রত থাকবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জবি/অনিক রহমান/হাকিম মাহি