ক্যাম্পাস

একজন তরুণের মানবপ্রেম

‘আমার প্রথম চাওয়া তরুণসমাজকে একটি প্ল্যাটফর্মে এনে অসহায় মানুষ এবং দেশের কল্যাণে কাজ করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি চাই, তরুণদের মধ্যে থাকবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এরা একে-অপরকে সহযোগিতা করবে, সর্বদা নিয়োজিত থাকবে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে।’ কথাগুলো বলছিলেন একজন ১৯ বছর বয়সী তরুণ মেহেরপুরের মামুন অর রশিদ বিজন।

নাম মামুন হলেও সবাই তাঁকে বিজন নামেই চেনেন। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিৎলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মো. শফিউর রহমান টমা। তাকে সবাই (টমা মেম্বার) হিসেবেই চেনেন এবং মা মুর্শিদা খাতুন। তাঁরা দুই ভাই এবং এক বোন। বিজনের মানবসেবার নেশা জাগ্রত হয় খুলনাতে অধ্যায়নকালে। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তার বিবেককে জাগ্রত করে।

বর্তমান সমাজে অনেক বিত্তবান প্রভাবশালী মানুষের আনাগোনা বেশি। কিন্তু এই বিত্তবান, প্রভাবশালী মানুষের সমাজে ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। ঠিক সেই সময় বিজনের মতো একজন ১৯ বছর বয়সী যুবকের দৃষ্টি পড়ে সমাজের অবহেলিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উপর। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেন গরীব অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করার জন্য।  অসহায়, রোগীদের রক্তের চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে এলাকার বেশকিছু যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ব্লাড ব্যাংক সোসাইটি’ নামক সামাজিক সংগঠন। এতে উপকৃত হন জেলার সাধারণ মানুষ। এভাবেই তার সাংগঠনিক পথচলা। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে শত বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজ তিনি তার স্বপ্নের শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।

বিজন বর্তমানে ‘কাম ফর হিউম্যানিটি’ নামক সংগঠনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। এখন পড়াশোনার মধ্য দিয়ে যতটুকু সময় পান তার সবটুকু সময়ই ব্যয় করছেন মানুষের সেবা করে। মানুষের জন্য কাজ করা তার যেন নেশা হয়ে গেছে। বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পথ চললেও পিছপা হননি কখনও। তিনি যেখানেই যান, সবাইকে তাঁর বুকে জায়গা করে দেন। এমন দৃষ্টান্ত যা অন্য ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া দুষ্কর। কলেজ পড়ুয়া তরুণ ছুটি পেলেই নিজ এলাকায় চলে আসেন মানবতার কাজ করার টানে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মামুন অর রশিদ বিজন বলেন, ‘আমি কাম ফর হিউম্যানিটির (সিএফএইচে) বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। এত বড় তারুণ্যের প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। আমি চাই, এই নেতৃত্ব শুধু আমি নই, নেতৃত্ব দিবে এ সময়ের তরুণরা। আর সেই লক্ষ্যে দেশের স্বপ্নবাজ তরুণদের নিয়ে আমার পথচলা। আগামীতে তাঁদের সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে আমিও কাজ করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজ জেলা মেহেরপুর থেকেই আমার সাংগঠনিক যাত্রা শুরু। তাই আমার প্রথম চাওয়া, জেলার তরুণসমাজকে একটি প্ল্যাটফর্মে এনে অসহায় মানুষ এবং দেশের কল্যাণে কাজ করার। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি চাই, দেশের প্রতিটা জেলা উপজেলায় কাম ফর হিউম্যানিটির প্রতিনিধিত্ব করবেন শত শত তরুণের মধ্যে থাকবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। সবাই একে-অপরকে সহযোগিতা করবেন। এতে তৈরি হবে তরুণদের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। আর সবাই সর্বদা নিয়োজিত থাকবে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে।’

ডিজিটাল দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বিজন বলেন, ‘গ্রাম হবে শহর’ এই স্লোগানকে ধারণ করে ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলার কিছু গ্রামে স্থাপন করতে চলেছি শিশু কিশোর আইটি স্কুল, যেখানে ৪র্থ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে আইটি শিক্ষা দেয়া হবে। সব পরিবারের নিকট আমার আবেদন, আপনার সন্তানকে ভালো কাজে দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে উৎসাহিত করুন। এতে আপনার সন্তানের নেতৃত্ব বিকাশ হবে, জড়তা দূর হবে, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। আমি মনে করি, ভালো কাজে অংশগ্রহণ করতে বয়স না দেখে ইচ্ছে শক্তিটাকে দেখুন, দেখবেন আজকের প্রজন্ম আগামীর বাংলাদেশের প্রকৃত হিরো হবে বলে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সাপোর্ট এবং ভালোবাসা আমাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। আমি সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ইবি/হাকিম মাহি