ক্যাম্পাস

স্বপ্ন ছোঁয়ার অনুভূতি

মানুষ নাকি তার স্বপ্নের মতো বড়। যদি তাই হয় তাহলে মানুষের দ্বারা তার স্বপ্ন ছুঁতে তো বেশি বেগ পাওয়ার কথা না। কিন্তু এই ক্ষুদ্র জীবনকালের প্রতিটি পদক্ষেপেই একজন ব্যক্তিকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তারপারও জীবনযুদ্ধ পেরিয়ে সফল হচ্ছেন অনেকেই।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন ১৭২ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের চার জন সেরা শিক্ষার্থীও আছেন এই তালিকায়। এই চ্যাম্পিয়নদের স্বপ্ন ছোঁয়ার অনুভূতি নিয়েই এ আয়োজন।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চারজন এই পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন তারা হলেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাজন সাহা (সিজিপিএ ৩.৯১), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের তানজিল আহমেদ (সিজিপিএ ৩.৮৯), বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ‌্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাহনুমা রহমান রিন্তী (সিজিপিএ ৩.৮১) ও কলা অনুষদের চারুকলা বিভাগের তাসনোভা শারমিন (সিজিপিএ ৩.৯৪)।

স্নাতক পর্যায়ে স্ব স্ব অনুষদে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এই চার শিক্ষার্থী। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ এর মধ্যে প্রকাশিত একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে মনোনীত হয়েছেন তারা।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমানে তার নিজের বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত সাজন সাহা। তিনি বলেন, ২০১৫ তে যখন প্রথম এই স্বর্ণ পদক শুরু হয়, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, আর আজ স্বপ্নপূরণ৷ বলতে গেলে অব্যক্ত অনুভূতি৷ খুব ভালো লাগছে। আমার সব সময়ের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন আমার বাবা-মা, শিক্ষক। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটা আবেগ সব সময় ছিল৷ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক পাওয়ায় খুবই ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় আছি। এই জায়গা থেকে নিজের সর্বোচ্চ দিতে চাই। আমার এই অর্জন বাবা-মা এবং প্রিয় এইচআরএম বিভাগকে উৎসর্গ করতে চাই৷

লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী তানজিল আহমেদ বলেন, আল্লাহতায়ালার কাছে শোকরিয়া জানাতে চাই, তিনি আমাকে এই অর্জনের যোগ্য মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য একটি বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার এ অর্জনে আমার পরিবার, শিক্ষকমণ্ডলী এবং শুভাকাঙ্খী সবাই অনেক উচ্ছ্বসিত। তবে আমার এই অর্জনে যিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন, তিনি আমার বাবা। তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। বাবাকে খুব মিস করছি।

এই অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা, শিক্ষক এবং সিনিয়র ভাই-বোনেরা। যাদের দিক-নির্দেশনায় আমি প্রতিনিয়তই অনুপ্রাণিত হয়েছি।

তিনি বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আইনজীবী ছিলেন। আমার প্রত্যয় ছিল, আমি একজন বীরের ছেলে, তিনি যখন অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছেন, তখন ইনশাআল্লাহ্ আমিও পারব। আমার অক্লান্ত চেষ্টা এবং সবার দোয়ায় 'প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক-২০১৮' এর জন্যে মনোনীত হতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস।

মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। যেগুলো এই অর্জনের পেছনে অনেক বড় সাপোর্ট হিসেবে কাজ করেছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১ম হওয়া (৪.০০ এর মধ্যে সিজিপিএ-৩.৮৯) ছাড়াও ইউজিসি মেধাবৃত্তি -২০১৮, নজরুল ইনস্টিটিউট হতে 'কাজী অনিরুদ্ধ মেধা বৃত্তি' প্রাপ্ত হয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৮' এর জন্য নির্বাচিত হয়েছি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩.৯৫ পেয়েছি। JKKNIURS কর্তৃক আয়োজিত' রিসার্চ প্রোপাজাল রাইটিং ২০১৯ এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সবার প্রতি অনুরোধ, আমার বাবার জন্যে এবং পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসা আমার সাফল‌্য ও অর্জনের ভিত্তি।

২০১২-১৩ সেশনের মাহনুমা রহমান রিন্তী বলেন, আমার এই অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমার বাবা-মা, শিক্ষক। ভালো ফল করা টার্গেট না থাকলেও যখন প্রথম সেমিস্টারে ডিপার্টমেন্টে প্রথম হয়েছি তখন থেকেই একটা জিদ চেপে গিয়েছিল যে আমাকে আমার এই স্থান ধরে রাখতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি সফল হতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক পাওয়া নিশ্চয়ই অনেক বড় অর্জন, স্বপ্ন তো ছিলই কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এটা ভাবিনি কখনো।

তিনি বলেন, সুযোগ পেলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতে চাই।

চারুকলা বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাসনোভা শারমিন জানান, স্বর্ণপদক পাওয়া নিয়ে অনুভূতি মিশ্র। একই সাথে এটা যেমন গর্বের আনন্দের তেমনি ভীষণ দায়িত্ববোধের। এতে খুবই সম্মানিত বোধ করছি।

শৈশব থেকেই শিল্পের প্রতি অনুরাগ তৈরির পেছনে মূল কারিগর আমার মা। কলা, নান্দনিকতা, শিল্প সাহিত্য এর প্রতি আবেগীয় সম্পর্ক তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছেন শুরু থেকেই। তবে সম্মানিত শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা, উৎসাহ এবং দিকনির্দেশনা ছাড়া আমার এ অর্জন কখনোই সম্ভবপর হতো না। অনুপ্রাণিত হয়েছি তাদের থেকেই, সবসময়।

ছোট থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল। শিল্পের প্রতি অনুরাগ থেকেই চারুকলার প্রতি গভীর আগ্রহ জন্ম নেয়। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও এর ধারাবাহিতায়ই হয়তো আমার এ অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ পরম উচ্ছ্বাসের, সম্মানের। তাঁর মতো বিশ্বনায়কের কাছ থেকে এমন সম্মাননা পাব এটা ছিল কল্পনাতীত।

তিনি বলেন, দেশীয় মেধা সম্পদের বিকাশে এ অর্জন তাৎপর্যময়। জাতীয় শিল্প সাহিত্যের বিকাশ সাধন করে প্রগতিশীল সামাজিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাংস্কৃতিক আবহ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে চাই। আমার পরিবার, শিক্ষকসহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষীকেই আমি এ পদক উৎসর্গ করতে চাই।

 

ঢাকা/আহসান হাবীব/সাইফ