ক্যাম্পাস

ওদের অনার্স জীবনের শেষ ক্লাস

ছেলেদের পরনে লুঙ্গি, মাথায় গামছা আর মেয়েদের পরনে বাঙালি শাড়ি। দেখে মনে হবে, এক ঝাঁক গ্রামবাংলার কৃষকের বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন।এই সাজের আলাদা রহস্য আছে। আর তা হলো ওদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনার্স লাইফের শেষ ক্লাস। তাই জানান দিতে চাচ্ছেন, ওরা বাঙালি সংস্কৃতিকে মনেপ্র্রাণে ধারণ করেন।

আজকের পর হয়তো আর কোনো দিন অনার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সুযোগ হবে না; শুনবে না স্যারদের অনুপ্রেরণামূলক কথা, বন্ধুদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বসে হয়তো আর আড্ডা হবে না। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা স্নাতক পর্যায়ের শেষ ক্লাসের দিন এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করছিলেন।

চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রয়েছে নানা স্মৃতি। তাই এসময়ের সমাপ্তিকালে সবার মনের আকাশেই জমে ওঠে আবেগের ঘন মেঘ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ ক্লাসের দিনটি ব্যতিক্রমভাবে স্মৃতির পাতায় মুড়িয়ে রাখতে তারা কৃষক- কৃষাণীর বেশে শেষ ক্লাস করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, পরিকল্পনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ক্লাস আসলেই আলাদা করে এই মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পঠিত বিষয় ছিল কৃষি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি, কৃষক আর কৃষিবিদ একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থনীতিতে প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। আমাদের জাতীয় আয়ের সিংহভাগই আসে কৃষি থেকে। কৃষিপ্রধান এদেশের ৮০-৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। সভ্যতা নির্মাণে কৃষি এবং কৃষকের অবদান সবচেয়ে বেশি হলেও আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন কৃষকরা।

যুগে যুগে শাসকের খাজনার টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে কৃষককে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে; নির্যাতন ও নিষ্পেষণে জর্জরিত হতে হয়েছে তাদের।তাই কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানাতেই আমরা এই ধরনের পোশাক বেছে নিয়েছি।

চার বছরের বন্ধুত্ব টিকে থাকুক আজীবন। কর্মজীবন এবং পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝেও যেন বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন না হয় এমনটিই প্রত্যাশা স্নাতক সম্পন্ন করা এই শিক্ষার্থীদের।

ক্লাস শেষে সবাই সেই সাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, অডিটরিয়াম, শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করেন এবং বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করেন পুরো ক্যাম্পাস। নোবিপ্রবি/হাকিম মাহি