ক্যাম্পাস

তরুণ ভোক্তাদের কথামালা

ভোক্তা অধিকার সম্পর্কিত বেসরকারি সংগঠন কনশাস কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) যুব সংস্থা কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)। দেশব্যাপী এর কার্যক্রম বিস্তৃত। সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করাই এই সংস্থার কাজ।

সিসিএস সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিওয়াইবির কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) সিওয়াইবির কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই সংগঠনটির তরুণ সদস্যরা সবসময় নিজেদের সক্রিয় রেখেছে। আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি কাজ হওয়া সত্ত্বেও এই তরুণেরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এর আশেপাশের এলাকায় ভোক্তা অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় যেন কোনোভাবে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সে ব্যাপারে সদা তৎপর রয়েছে সংগঠনটি।

গত কয়েক মাসেই এই সংগঠনের সক্রিয়তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে মুগ্ধ করেছে, প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ত্রিশালের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা, ভর্তি পরীক্ষার সময় এবং এর আগে ও পরে ব্যবসায়ীদের অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সর্বক্ষণ কাজ করাকে অনেক ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গত নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ত্রিশালের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল সিওয়াইবি জাককানইবি শাখা। সেখানে অর্ধশতাধিক হোটেল মালিকদের উপস্থিতিতে পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। মতবিনিময় সভাটিকে অনেক কার্যকরী একটি আয়োজন দাবি করেন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ‘স্পার্ক ক্যাফে’র মালিক পার্থ বলেন, ভোক্তা অধিকার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রেস্টুরেন্টের জরিমানা হয় এমন অনেক কিছুই অজানা ছিল, যা আজ জানতে পারলাম। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সবসময় সিওয়াইবিকে পাশে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

নিয়মিত বিরতিতে তদারকিতে বের হয়ে থাকেন সংগঠনটির সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোতে পরিদর্শনে বের হওয়ার সময় প্রতিদিনই উপস্থিত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ সিওয়াইবির উপদেষ্টা হিসেবে থাকা শিক্ষকরা। ফলে দোকানিরা নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা প্রকাশ করেছে, যা অহেতুক মূল্যবৃদ্ধিতে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের হার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলেও অনেকখানি কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে সারা দেশের সিওয়াইবির সদস্যদের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরাও একযোগে এক সপ্তাহ পেঁয়াজ বর্জন করার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। সাথে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই বের হন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট তদারকিতে, সাথে ছিল সিওয়াইবি। উপাচার্য সিওয়াইবির কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও খাদ্যে ভেজালের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সিওয়াইবির মাঠে নামাকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেছেন।

‘খাদ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশন বর্তমান সময়ে একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। ভোক্তাদের অধিকার প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ভোক্তাদের এই অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে ময়দানে সবসময় সক্রিয় থাকব আমরা এবং এ যুদ্ধে পাশে চাই সর্বস্তরের ভোক্তাসমাজকে’, বলেন সিওয়াইবির জাককানইবি শাখা সভাপতি আদীব রাহেমান।

সাধারণ সম্পাদক সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান বলেন, ‘সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গড়তে ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়ন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভোক্তা সচেতনতা সৃষ্টি হোক এটাই চাই এবং ভোক্তা অধিকার যোদ্ধাদের পাশে সবসময় আছি।’

প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে খাদ্য পরিবেশনকারী হোটেলগুলোতে নিয়মিত বিরতিতে পরিদর্শন করছি। খাদ্যের মান, খাদ্য মূল্য ও পরিবেশ নিয়ে দোকানদারদের সবসময়ই সচেতন করে আসছি। আমরা চাই খাদ্যদ্রব্যের আদর্শ মানসম্মত পরিবেশন নিশ্চিত হোক। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সজাগ থাকবে।’

এব্যাপারে সিওয়াইবি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে বলেও জানান তিনি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। জাককানইবি/হাকিম মাহি