ক্যাম্পাস

করোনা শনাক্তকরণ কিট: ফিরোজ আহমেদের সাফল্য

গবেষণা একটি সাধনার বিষয়। গবেষণার মাধ্যমে নতুন তথ্য আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। অন্যান্য দেশের মতো গবেষণায় সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি থাকলেও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশিদের গবেষণা।

তেমনি এক গবেষণার মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশি গবেষকদের গবেষণা। আর সেটি হলো বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবন।

পুরো বিশ্ব যখন এই ভাইরাসের প্রকোপে হিমশিম খাচ্ছে, তখন এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করল বাংলাদেশ।

এই যুগান্তকারী গবেষণায় গবেষক দলের একজন হলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের লুইস পাস্তুর ইন্সটিটিউট থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। এরপর আইসিডিডিআরবিতে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণার সাথে যুক্ত আছেন তিনি।

করোনা ভাইরাসের কিট আবিষ্কারের এই গবেষণার বিষয়ে ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘এটা ভিন্ন পদ্ধতি। এর নাম হলো- ‘র‌্যাপিড ডট ব্লট’। ব্লাড গ্রুপ যে পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা হয়, এটা মোটামুটি সে রকমের একটি পদ্ধতি। ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল, তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ‘র‌্যাপিড ডট ব্লট’ পদ্ধতিটি ড. বিজন কুমার শীলের নামে পেটেন্ট করা। পরে এটি চীন সরকার কিনে নেয় এবং সফলভাবে সার্স মোকাবিলা করে।’

‘প্রচলিত কিট যেটা ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা খুবই ব্যয়বহুল। এর জন্য একটা দামি যন্ত্র, দক্ষ মানব সম্পদ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ অবকাঠামো প্রয়োজন হয়। করোনা মহামারির মতো নতুন আঙ্গিকে আসা রোগব্যাধি নির্ণয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল হবার কারণে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। অথচ আমাদের পরীক্ষা করা উচিৎ ছিল হাজার-হাজার’, বলেন তিনি।

উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব উল্লেখ করে ড. ফিরোজ আরো বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মাত্র ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শনাক্ত করা যাবে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা। এতে খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। সরকার যদি এর ওপর ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ না করে, তাহলে আমরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বাজারজাত করতে পারব।’

‘আমরা মাসে এক লাখ কিট সরবরাহ করতে পারব। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে প্রাথমিকভাবে আগামী মাসের মধ্যেই ১০ হাজার কিট সরবরাহ করতে পারব’, বলেন এই গবেষক। নোবিপ্রবি/হাকিম মাহি