ক্যাম্পাস

করোনার দিনগুলোতে ঢাকা

ধু ধু প্রান্তর। ঈদ ছাড়া ঢাকার এমন অবস্থা অকল্পনীয়। আমাদের অতি পরিচিত ঢাকার দৃশ্যপট ঠিক এমনটি নয়। করোনার থাবা একে বাধ্য করেছে এমন হতে।

বিশ্বে এর তাণ্ডব চলছে, মাত্র বাংলাদেশে এসেছে কোভিড-১৯। তাতেই এ অবস্থা পুরো ঢাকার। কেউ আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে, কেউ ছুটেছেন গ্রামে, কেউবা বাসা থেকেই বের হচ্ছেন না। অবস্য এ বিধিগুলো মেনে চলা সবার দায়িত্ব, দেশের সরকারও এ ব্যাপারে কঠোর। ফলে, আমাদের প্রাণপ্রিয় ঢাকা আজ হয়ে গেছে অনেকটা ফাঁকা।

ঢাকার রাস্তাগুলোতে আজ নেই কোনো জৌলুশ, নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার। বন থেকে গাছ উজাড় করে নিলে যেমন বনের প্রাণ শুষে নেওয়া হয়, তেমনি ঢাকার প্রাণ শুষে নিয়েছে করোনা।

ঢাকায় দেড় কোটিরও বেশি লোকের বসবাস। সর্বদা প্রাণচাঞ্চল্যে থাকা এই নগরটি আজ হয়ে ওঠেছে প্রাণহীন এবং ভুতুড়ে। সদা ব্যস্ত নগরীর কোথাও নেই আজ এক ফোটা ব্যস্ততা। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে এমনই প্রমাণ মিলেছে।

মিরপুর

ঢাকাবাসীর বসবাসের প্রথম পছন্দ মিরপুর। এজন্য এই এলাকায় মানুষের ঘনত্ব বেশি। কে বলবে এটি সেই সুপরিচিত মিরপুর। রাস্তাজুড়ে মানুষ নেই বললেই চলে, মার্কেটগুলোতেও আজ নেই কোনো ভিড়, গণপরিবহনের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। অথচ কিছুদিন আগেও এখানে ছিল নানা শ্রেণীপেশার মানুষের আনাগোনা।

গুলিস্তান

এটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট। যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হতো, আজ সেখানে নেই কোনো জ্যাম। গাড়ি চলছে তীব্র গতিতে, এমন ভাবনাটাও কিছুদিন আগে ছিল অকল্পনীয়।

সেই গুলিস্তান আর আগের মতো নেই। জিরো পয়েন্টে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ বলেন, দেশের এমন অবস্থা আমি আগে কখনো দেখিনি। এই রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা এত কম বিশ্বাসই হয় না। কার্যক্ষেত্রে মনে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করছে, কখন না জানি কী হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার সাথে সাথেই অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাঙ্গনগুলো। দেশের অন্যতম জনবহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে লকডাউন থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা মিলছে না কারোরই, নেই কোনো প্রাণী। ক্যাম্পাসের সেই আড্ডাগুলোও আজ নেই। দেখা যাচ্ছে না বই-খাতা হাতে নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। সর্বদা তরুণদের পদভারে মুখরিত প্রিয় ক্যাম্পাসটি আজ খাঁ খাঁ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিদা সরদার বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধের কারণে আমরা আর যাচ্ছি না, মনে আতঙ্ক নিয়ে না যাওয়াই ভালো।’

গাবতলী

গাবতলী এমন একটি স্থান, যেখানে দেখা মিলত নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের। কেউ দাঁড়িয়ে থাকতো গাড়ির আশায়, কেউবা দাঁড়িয়ে থাকতো সোনার হরিণ খ্যাত বাসের টিকেটের জন্য, কখনো বা দেখা যেত লম্বা লাইনের শেষ মাথা। কিন্তু আজ সেখানে তেমন চলছে না দূরপাল্লার বাস, কেউ আসছে না টিকেটের খোঁজে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে কর্মরত ঈমান আলী জানান, এখন টার্মিনালে যাত্রীদের কোন চাপ নেই, স্বল্প পরিমাণে দূরপাল্লার গাড়ি চললেও সেগুলো প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে।

নিউমার্কেট-নীলক্ষেত

নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব নাম শুনলেই চোখে ভেসে উঠতো অসংখ্য মানুষের ভিড়। হাতেগোনা কয়েক দিন আগেও এখানে তিল ধারণে ঠাঁই ছিল না। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত প্রায় সকল ধরনের লোকের পছন্দস্থল ছিল নিউমার্কেট। তাই, কেনাকাটার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো অনেকেই। কিন্তু সেগুলো আজ কল্পনাতীত এবং চোখে ভাসে। আতঙ্কে ফুটপাতের দোকানগুলোও উঠে গেছে।

নিউ মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে, কিন্তু সবাই সাবধান থাকুক এটাই তাদের চাওয়া। জনমানবহীন এমন নিউমার্কেট তাদের চিন্তার বাইরে।

সদরঘাট

একই অবস্থা নগরীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনালসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে। দর্শনীয় স্থানগুলোতে নেই দর্শনার্থীদের কোনো আনাগোনা। সব মিলিয়ে যেন এক ক্রান্তিকাল পার করছি আমরা। দেশের এমন পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়। তবুও মানুষ ঘরে থাক, নিজে সুস্থ থাকুক এবং অপরকে সুস্থ রাখুক, এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জবি/হাকিম মাহি