ক্যাম্পাস

মন পড়ে আছে সেই সবুজ বনে

ক্লান্ত দেহ আর বিষণ্ন মনকে একটু প্রশান্তির দিতে সবাই আনন্দ ভ্রমণে যেতে প্রস্তুত। এতে সঙ্গী ছিলেন ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের একঝাঁক তরুণ ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ।

এক বসন্তের ভোরে ক্যাম্পাসের মূল ফটক দিয়ে গাড়ি দুটি সফিপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সবার চোখে-মুখে তখন অন্য রকম অনুভূতির ছাপ। আনন্দের জোয়ারে ভাসছিলেন। সবাই বাসের মধ্যে গানের তালে শুরু করলেন নাচ। কেউবা সেলফি তুলে ফেসবুক- ইনস্টাগ্রামে আপলোড দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

বাস কিছুদূর যেতেই পথিমধ্যে সবাই সকালের নাস্তা সেরে নিলেন। নাস্তার পর আবারো শুরু হলো আনন্দ-উল্লাস। ঢাকা পেরিয়ে বেলা ১১টায় আমরা পৌঁছে গেলাম নিরিবিলি স্পটে।

আহ!  দু’চোখ যেন শান্তি খুঁজে পেল। শহুরে যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা গণ্ডি পেরিয়ে জীবন যেন অন্য এক অনুভূতির দরজায় পা রেখেছে৷ সবুজ ঘাস, জানা-অজানা বিকট শব্দ, বিরল প্রজাতির গাছ এবং পাখি। সত্যি মনটা ভরে উঠলো। চোখ জুড়িয়ে গেলো। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। যদিও শহরের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কম দেখা যায়। ভাবতে অবাক লাগে, যখন দেখি গাজীপুরের সবুজের সমারোহ, চারপাশে গাছপালা, পাখ-পাখালির কলকাকলি, মৃদু বাতাস সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক পরিবেশ।

বলছি ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার সফিপুর থানার একাডেমির কথা, এটি মূলত বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য গড়ে তোলা হলেও এখানকার নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটিকে পিকনিক ও শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এখানে প্রায় ৪২টি পিকনিক স্পট রয়েছে। সবুজে ঘেরা এই স্পটগুলো সবুজ বনানী, লেক ও ছাউনি সবকিছু আমাদের মুগ্ধ করে। বিনোদন ও ক্লান্তি মোচনের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

জাগতিক মায়া যখন বিভ্রম প্রমাণিত হয়, মানুষ যখন অনুভূতির জগতে শুন্য হয়ে পড়ে, তখনো নির্বাক হয়ে মানুষের মনে আলো ছড়ানোর অসম্ভব ক্ষমতা রাখে গাজীপুরের এই সবুজ প্রকৃতি।

সকলে একসঙ্গে বসে কখনো বাংলা আধুনিক গান, কখনো বা লোকসংগীত, ভাটিয়ালি অনবরত শুনতে থাকেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মুখে সমস্বরে শুনা যায় ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, লোকে বলে, বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা না আমার, অভাগার বাসরে বন্ধু কেনো আসলে না’ এছাড়াও মান্নাদের বিখ্যাত কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...।

অতঃপর চা পানের ব্যবস্থা করা হলো। নিরিবিলি স্পট নামে যেমন নিরিবিলি, বাস্তবে আরো বেশি শান্ত প্রকৃতির। গাছপালা আর সবুজ অরণ্যে ঘেরা এক শান্তির জায়গা। সবাই চারদিকে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন, কেউবা স্যার ম্যামদের নিয়ে গ্রুপ ছবি তুলছেন, আবার কেউবা সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

শুরু হলো আমাদের খেলাধুলা পর্ব। মেয়েদের জন্য চেয়ার খেলা, বালিশ নিক্ষেপ। ছেলেদের জন্য ফুটবল খেলা, আর দৌড় প্রতিযোগিতা।

স্যারদের জন্যও ছিল মোড়গ লড়াইসহ হাড়ি ভাঙা খেলা। তারপর আমরা দুপুর ২টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়ার মজাই আলাদা, যা বলে প্রকাশ করা যাবে না।

নেমে এলো গোধূলি। শুরু হলো র‌্যাফেল ড্র, আকর্ষণীয় ২০টি পুরস্কার দেওয়া হলো শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের মাঝে, সঙ্গে খেলার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদেরও পুরস্কৃত করা হলো।

সবশেষে আমরা পুরো আনসার একাডেমি ঘুরে দেখার সু্যোগ পাই। সোডিয়াম আলোতে তখন পুরো একাডেমি সেজেছে ভিন্ন এক সাজে। ঘোরাঘুরি শেষ করে মনের প্রশান্তি নিয়ে আবারো ফিরে আসা ইটের দেয়ালে ঘেরা শ্বাসরুদ্ধকর এই শহরের দিকে।

বাসের মধ্যে সবাই নতুন করে গলা ছেড়ে গান শুরু করলেন, রাত তখন ৯টা বাজে। এ সময় এসে পৌঁছলাম প্রাণের অনুভূতির শেষ ঠিকানা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে। কিন্তু সে রেশ এখনো কাটেনি। মনে হয়, মন এখনো পড়ে আছে সেই সবুজ বনে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ডিআইইউ/হাকিম মাহি