ক্যাম্পাস

অসহায়দের পাশে ‘লেটস ফাইট টুগেদার ফাউন্ডেশন’

করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি সবাইকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, এই চিন্তা থেকে পথচলা শুরু লেটস ফাইট টুগেদার ফাউন্ডেশনের (Let’s Fight Together Foundation)।লকডাউনের বন্ধে চট্টগ্রাম কলেজের ২০১৬ সালের এইচএসসি ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

করোনা মোকাবিলায় গোটা দেশ যখন লক ডাউন, তখন কাজ করতে না পেরে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে হাজারো পরিবার। কেউ কিছুটা ত্রাণ পাচ্ছেন, কারো ভাগ্যে সেটাও জুটছে না। আবার কেউ বা লজ্জায় কারো থেকে চাইতেও পারছেন না। এমন পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্যই এই উদ্যোগ তরুণদের।

ইতোমধ্যে জনদরদি অনেকের সাড়া ও অনুদান পেয়ে অনেকগুলো পরিবারের এই মাসের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে ফাউন্ডেশনটি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফাউন্ডেশনের কাজের সাথে যুক্ত তাকরীম প্রিয়ম বলেন, ‘আমরা কাজ করছি নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিয়ে। এমন অনেকেই আছেন যাদের বাবা নেই বা অনেকের বাবার বেতন বন্ধ, কিন্তু আত্মসম্মানবোধের কারণে কারো থেকে চাইতে পারে না, আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাসমান মানুষদের নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে, কিন্তু সেই পরিমাণ লজিস্টিকস সাপোর্ট না থাকায় এখনো পারছি না। তবে আমাদের কানেকশনের মধ্যে থাকা যেসব পরিবারের সাহায্য দরকার, তাদের আমরা সাহায্য করছি।’

তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফরিন সামিয়া বলেন, ‘পুরো পৃথিবী এখন একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সময়টা এমন যে কাউকে সাহায্য করার জন্য আমরা বাসা থেকেও বের হতে পারছি না। তাই আমরা এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম, যাতে করে বাসায় বসেই এই বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। আর সেই চিন্তা থেকেই কয়েকজন বন্ধু মিলে এটা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া।’

‘কাজটা শুরু করার পর থেকে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি, যেটা সত্যিই একটা পজিটিভ ব্যাপার আমাদের জন্য। মানুষের এমন সাহায্য অব্যাহত থাকলে এটাকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমাদের’, বলেন তিনি।

এছাড়াও ফাউন্ডেশনের কলাকুশলীদের মধ্যে আছেন আইউটির সুলতান উদয়, কুমেক এর তামান্না, নর্থ সাউথের মুনজাবের, তারেক, চুয়েটের তাফান্নুম, এমআইএসটির রিয়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জারিন সুবাহসহ চট্টগ্রাম কলেজের ২০১৬ সালের এইচএসসি ব্যাচের আরো অনেক শিক্ষার্থী।

সিনিয়রদের এমন উদ্যোগে পিছিয়ে নেই কলেজের জুনিয়র শিক্ষার্থীরাও। অভিনব এক উপায়ে তারা এই কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে মানবতার স্বার্থে। চট্টগ্রাম কলেজের ২০২১ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী ঐন্দ্রিলা বড়ুয়া, ইয়াসির জুনাইদ, মুশফিকুর রহমান ডোনারদের ডোনেশনের বিনিময়ে পোর্ট্রেইট করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

নর্থ সাউথে পড়ুয়া মুনজাবের কাশেম প্রান্ত বলেন, ‘পুরো পৃথিবীই এখন বিপদে আছে। অনেকেই হয়তো দুই মাস আগেও ভাবতে পারেনি তারা এমন বিপদে পড়বে। অনেকেই অপ্রস্তুত অবস্থায় বিপদে পড়ে লজ্জায় সাহায্য চাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন হয়তো, কিন্তু এরা তো ত্রাণও চাইবে না। তাই আমরা এদেরকে অন্তত নিয়মিতভাবে একটা সাপোর্ট দিয়ে যেতে চাই। আমরা সবাই যদি অন্তত নিজেদের দৈনন্দিন ইন্টারনেট খরচ থেকেও কিছু টাকা বাঁচিয়ে এদের সাহায্যে এগিয়ে আসি, তাহলে হয়তো অনেকের ভালো থাকাই নিশ্চিত হবে।’

এই তরুণরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে গরীব-দুখী বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে।

 

বুয়েট/হাকিম মাহি