ক্যাম্পাস

সময় ও জীবনের ক্ষুদ্র প্রয়াস

সময় শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এর ব্যাখা শেষ করা সম্ভব নয়। এর কোনো অস্তিত্ব বা স্থায়িত্ব কিছুই নেই। সে আপন মনে সবাইকে বিদায় দিচ্ছে। কিন্তু সে নিজেই বিদায় নিতে পারছে না। অনবরত চলছে তো চলছেই। সময় আমাদের সহায়ক। আর এ সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত। ঘড়ির কাঁটা কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এজন্য বলা হয়ে থাকে, তুমি সময়কে সময় দাও, তাহলে সময় একদিন তোমাকে সময় দেবে।

জীবন হলো সময়ের কাছ থেকে কিছু দিনের জন্য ধার করা অস্তিত্ব। যার শেষ রয়েছে। নানা কিছু পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। রাখে না শুধু সময়কে একটু বেঁধে দিতে। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে, জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে। মাঝ-খানে শুধু জীবনের কর্মের প্রতিফল রেখে যাচ্ছে, যার উপর মানুষের বিচার ফয়সালা করা হবে। জীবনঘড়ি মানুষের প্রত্যহ বিবর্তনশীল কর্মধারায় প্রবাহিত একটি সীমিত হায়াতের ওপর নির্ভরশীল। এটাই চিরসত্য কথা। বেঁচে থাকার যুদ্ধে যৌবনের জোয়ারে প্লাবিত এ জীবন নদীতে একদিন ভাটা পড়বে।

সময়ের গুরুত্ব আমি নিজেই। আমি যদি সময়কে সঠিক ব্যবহার না করি। সময় কিন্তু আমায় সঠিকভাবেই গুরুত্ব দিয়ে আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে। আর ফিরে আসছে না। আরব্য কবির এক প্রবাদ, ‘তুমি যদি সময়কে সঠিক সময়ে না কাটো, তাহলে সময় তোমাকে কেঁটে ফেলবে।’

সময়ের অস্তিত্ব অজানা থাকে কিন্তু জীবন সময়ের সাথে বিদ্যমান। সময় সামগ্রীকরূপে চলমান। জীবন সময়ের অনুকূল প্রতিকূলের সাথে মিশিয়ে রয়েছে। সময়ের কোনো শেষ নেই, জীবনের শেষ রয়েছে। জীবনকে অনুভব করতে চাইলে সময়ের সঠিক শ্রম দিতে হবে। তাহলে সময় আমাকে ভালো-মন্দের ভাব বুঝতে সহায়তা করবে। সময়ের কোন রূপ নেই, জীবনের রূপ রয়েছে। সময় ও জীবনের পার্থক্য বিশাল।

আমরা যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তারপর এ সময় দুনিয়াতে আগমন করলাম, ধীরে ধীরে হাঁটা শিখলাম, কথা বলা শিখলাম, আমরা আপনজনকে চিনতে শিখলাম, মানুষের সাথে মিশতে শিখলাম। যখন বুঝতে শিখলাম, তখন আমার যে কর্তা আমাকে ছেড়ে দিলেন লড়াই কর সময়ের সাথে। যদি তুমি নিজেকে সফল করতে চাও তাহলে সময়ের পরিচর্যা করে মানবপ্রেমী হও জীবনের মহৎ দিকগুলো তুলে ধর। এটাই সময় আর জীবনের প্রয়াস।

সব কিছুতে তুমি নিজের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও। এই ক্ষুদ্র জীবনের প্রয়াস হলো যে কোনো কাজের সাথে নিজেকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। আমরা যখন শিশু থেকে বড় হয়ে সাবালক, তখন থেকে সময়ের সাথে আমাদের ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার শিক্ষা পাই।

কিন্তু আমাদের সমাজে সময়ের সঠিক মূল্যায়নের চিত্রটা খুব কম পাওয়া যায়। সেটার বিভিন্ন কারণও রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমরা হাজারো পরিকল্পনা করতেছি বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই। সময় সবাইকে এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সময়কে নষ্ট করে হারিয়ে দিয়েছি সত্যিকারের মানুষ হওয়ার রূপটাকে।

জীবন যদি গঠন করতে চাই, সময়কে গুরুত্ব দিয়ে গঠন করতে হবে। এটাই সময়ের চলমান রূপে জীবনের চাহিদা। সময়ের হারিয়ে যাওয়াকে ভুলে না গিয়ে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে জীবন সাজানো সবার করণীয়। হয়তো এখানে পেতে পারি সময় ও জীবনের ক্ষুদ্র প্রয়াস। মনে রেখো, তুমি যদি সময় নষ্ট করো, সময় তোমাকে নষ্ট করবে। সুতরাং সময়কে কাজে লাগাও, জীবন কাজে লাগবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ইবি/হাকিম মাহি