ক্যাম্পাস

‘আসবে সুসময়, ফিরব ক্যাম্পাসে’

করোনার ঝড়ে থমকে আছে গোটা বিশ্ব। অদ্ভুত দুনিয়ায় এখন একই সুর। একই রব। একই আতঙ্ক। তবে আশার বিষয় হলো, কোথাও কোথাও কড়া লকডাউন হচ্ছে ঢিলেঢালা, মৃত্যুর হারও কমেছে। তবে, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। এটি একটি নতুন উদ্বেগের বিষয়।

এমন পরিস্থিতিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে ঢাকার অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) বন্ধ রয়েছে। কবে খুলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এই সংকটকালীন মুহূর্তে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? এই সব শিক্ষার্থীদের কথা জানাচ্ছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আসমাউল মুত্তাকিন।

জুয়াহরিয়া বিনতে আলী (অরনি), ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

এই প্রথম দীর্ঘ দুই মাস বাসায় সবাই মিলে কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছি। হ্যাঁ, তবে একটানা বাসায় থেকে মন খারাপ হচ্ছে। কারণ, মিস করছি সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসটিকে। দিনের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় ক্যাম্পাসে কাটাই। সেই সময়গুলো ভীষণ মনে পড়ে। কিন্তু বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে বাসায় থাকাই শ্রেয়। তাই নিজের অবসর সময়টা ব্যয় করছি বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে। সেল্ফ ইমপ্রুভমেন্টের ওপর বেশি জোড় দিচ্ছি। নাচ, গান, নাট্য এবং গ্লামারে প্রিয় মানুষ আমি। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেকে এসব বিষয়ে দক্ষ করতে চেষ্টা করছি। সারাদিন এভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হলো এই সময়টা নিজের পরিবারের সাথে কাটাচ্ছি।

দূর্জয় মিত্র বড়ুয়া (অর্ক), আইন বিভাগ

কোয়ারেন্টাইনে আমার বেশ ভালো কাটছে। অনেক দিন পর পরিবারের সাথে জমিয়ে কাটাচ্ছি। যেহেতু আমি পড়ালেখার পাশাপাশি অভিনয় এবং মডেলিংয়ের সাথে যুক্ত তাই শুটিং,পড়ালেখা, প্রোগ্রাম এত কিছুর মধ্যে পরিবারকে একদমই সময় দেওয়া হতো না। আব্বু-আম্মু আমাকে কাছে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছেন। সারাদিন তাদের সঙ্গে গল্প করে কেটে যায়। পাশাপাশি পড়ালেখাকে ঠিক রাখছি। অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। ফলে বাসায় বসেই আমাদের পড়ালেখা এগিয়ে চলছে।

স্যার এবং ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাদের সব সময় খোঁজ নিচ্ছেন। যেহেতু আমি থিয়েটার এবং মিডিয়াতে আছি, তাই নিজেকে অভিনয়ে দক্ষ করে তুলছি। কারাতে প্রাক্টিস করছি। অবসর সময়ে সাইকোলজি রিলেটেড বই পড়ছি। নাচ, গান, আবৃত্তি, রান্না এইসবে নিজেকে দক্ষ করার চেষ্টা করছি। আর হিন্দি এবং ইংলিশ ভাষা শেখার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর বেশি মিস করছি আমাদের চিরচেনা সবুজ ক্যাম্পাসকে। কত দিন বনমায়ায় বসে আড্ডা দেওয়া হয় না, কত দিন ডিটির গলির মামার সিঙ্গারা খাওয়া হয় না। একদিন সব হবে, পৃথিবীটা একটু সুস্থ হোক।

মুন্না মনির, ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

হোম কোয়ারেন্টাইন আমার মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবনকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং করেছে। এতে করে আমি আমার ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাসগুলোর সাথে সংযুক্ত হতে পেরেছি। আমার পরিবারের সাথে ভালো সময় পার করছি। নিজের প্রতিভাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এর সাথে মডেলিংয়ের জন্য নিজেকে গ্রুমিং করছি, গান, নাচ ও আবৃত্তি করছি। পাশাপাশি নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচিত হচ্ছি। যেহেতু উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা আমার আছে, সেহেতু বিভিন্ন অনলাইন সেশনে অংশগ্রহণ করছি।

হোমায়রা জেরিন জ্যোতি, ডিপার্টমেন্ট অব এনএফই

যে মানুষগুলো খোলা ক্যাম্পাসের চারদিকে দাপিয়ে বেড়ায় রাতদিন, তাদের জন্য কোয়ারেন্টাইন শব্দটা মোটেও সুখের নয়। কিন্তু এমন এক বৈশ্বিক পরিস্থিতে ঘরে থাকা যেহেতু সুস্থ থাকার একমাত্র উপায়, তাই ঘরে থাকাই শ্রেয়। কোয়ারেন্টাইন ততটাও খারাপ হয় না, যখন পরিবার সাথে থাকে। বাসার সবার সাথেই ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। আমি এই সময় আমার ভার্সিটিলাইফটা সত্যিই অনেক মিস করছি। কিন্তু শিক্ষকসহ বন্ধুদের সাথে ঘরে বসেই দেখা করতে পারছি অনলাইনে। এটা আসলে মানসিক শান্তির একটা বড় জায়গা।

হাসিবুল আলম জিন্নাহ, টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট 

বর্তমান সময়টা সবারই অন্যরকমভাবে কাটছে, সেখানে আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। তবে কেটে যাচ্ছে সময়টা আল্লাহর রহমতে। এখন রমজান মাস। বেশ ধার্মিকতার মধ্য দিয়ে দিন যাচ্ছে। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ পড়ছি তার পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত করি। বেশি বেশি দোয়া করি, যাতে আমরা এই কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পাই। তাছাড়া অবসর সময়ে ঘরের কাজে কিছু সাহায্য করি এবং মাঝে মধ্যে  সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি এবং তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।

নওশীন তাবাসসুম মাটি, ডিপার্টমেন্ট অব নিউট্রিশান অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং

কোয়ারেন্টাইনের কারণে অনেক দিন যাবত বাসায় আছি। আর বিগত দিনগুলোতে পরিবারের সাথে দারুণ সময় কাটছে। নিজের প্রতিভাকেও কাজে লাগাতে পারছি। গান করছি, কবিতা লিখছি, নতুন নতুন রান্না করছি। বেশ তো চলে যাচ্ছে দিন। ক্যাম্পাসটাকে খুব মনে পড়ছে। আমার ক্যাম্পাসটা আমার কাছে খুব প্রিয়, হলে থাকার সুবাদে আমার বিল্ডিংয়ের সেই ঘরটা আমার অনেক আপন। খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে চাই ক্যাম্পাসে।

ফারহান সাদিক, ইংরেজি বিভাগ

তারিখটা এখনো মনে পড়ে, মার্চের ১১, আমাদের মিড শেষ হলো। দুই/তিন দিনের জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য চলে এসেছিলাম বগুড়াতে। কিন্তু ওই দুই/তিন দিন যে দুই/তিন মাসে পরিণত হবে, এমনটা ভাবতেও পারিনি। মাঝে মাঝে হতাশা ঘিরে ধরে এই সময়ে, আবার দুই-তিন বছরে পরিণত হবে না তো! প্রথম কয়েকদিন বাসায় থেকে মনে হলো, না এভাবে সময় কাটানো ঠিক হচ্ছে না। তাই আমার পছন্দের কাজগুলো করছি। অনলাইন ক্লাস করছি। পড়াশোনা সঠিকভাবে করার চেষ্টা করছি।

আল আরাবী আনাম, ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

বাসা থেকে বের হই না প্রায় দুই মাস। একটানা এত দিন বাসায় থাকতে হবে এটা কখনো ভাবতে পারিনি। যাইহোক, এই সময়টা একদিকে যেমন অনেক কষ্টকর, অন্যদিকে সুখের। বাবা-মায়ের সাথে সারাক্ষণ নানা কাজে সময় কাটাচ্ছি। বাসায় থেকে শিখেছি রান্না। নিয়মিত ব্যায়াম করছি। ইউটিউব দেখে নানা রকম অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে নিজেকে করছি দক্ষ। প্রিয় ক্যাম্পাসের কথা প্রতিদিনই মনে পড়ে। কবে আবার ফিরব জানি না। তবে এইটুক বিশ্বাস করি, আবার ফিরব ক্যাম্পাসে, আবার আড্ডা জমে উঠবে চায়ের কাপে। ঢাকা/হাকিম মাহি