ক্যাম্পাস

‘ফিচার নিয়ে ফিচার করি’

কয়েকটি বোর্ড রঙবেরঙের কাগজে সাজানো। তার চারদিকে বান্টি বেলুনের মেলা। লাল ফিতার ওপারের জায়গাটি ঝকঝক করছে।

সকালে তরুণ-তরুণীরা বোর্ডগুলো ঘষামাজা করেছিল। কাগজের ফুল বানিয়ে কাষ্ঠফলকে আঠা দিয়ে গালিয়ে দিচ্ছিল। পাশে খববের কাগজ রাখা ছিল। তারা আনন্দ উৎসবে সেই খবরের কাগজগুলো কেঁটে টুকরো করলো। অন্যরা সেই টুকরো করা খববের কাগজগুলো বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দিলো।

বেলা গড়িয়ে সূর্য মামা মাথার ওপরে ওঠে গেছে। যেই তরুণ-তরুণীরা ঘোরাঘুরি করছিল, তাদের আর দেখা যাচ্ছে না। দূরে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ বাতাসে ভেঁসে আসছে। মিনিট দশেক পরে গোটা পঞ্চাশ জন মানুষ এগিয়ে আসছে এদিকে। পরনে কেউ শাড়ি, পাঞ্জাবি কেউবা ফর্মাল।

তারা যখন লাল ফিতার কাছে এসে থেমে গেলো৷ তখন এক তরুণী কেঁচি বাড়িয়ে দিলো এক মধ্যবয়সী সাহেবের হাতে। কে যেন বলে উঠলো, তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মুর্ত্তজা আলী বাবু স্যার। ফিচার প্রদর্শনী উদ্বোধন ও ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের লেখা দেখতে এসেছেন।

এরপরই নিস্তব্ধ জায়গাটি মানুষে ভরে উঠলো। সবার চোখ পেপারের টুকরো কাগজগুলোর দিকে। কেউ বলছে এটা কে লিখেছে! কেউ খুঁজছে তার প্রিয় ছবিগুলো। কেউ আবার আপন মনে লেখাগুলো পড়ছে৷ ফাঁকে ফাঁকে চলছে ফটোসেশন।

শুধু এই কয়টি বোর্ড নয়। গবি সাংবাদিক সমিতি-গবিসাস কার্যালয়ের চার দেয়ালে বন্দি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্মৃতি। কক্ষটিতে স্থান পেয়েছে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ ও প্রলাপগুলো।

দুপুর থেকে বিকেল দু’ঘণ্টা চলে এই ফিচার প্রদর্শনী। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মীদের এই প্রদর্শনীতে দেখা যায়।

প্রদর্শনীতে গবিসাস নতুন-পুরাতন বেশিরভাগ গুরুত্বপুর্ণ লেখা তুলে ধরা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের আলোকচিত্রগুলো প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য এসব পছন্দের ভারকেন্দ্রে রুপ নেয়।

কথা হয় সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ফায়জুন নাহার সিতুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক সমিতির একজন সদস্য হিসেবে এই আয়োজনটি নিয়ে খুব আনন্দবোধ করছি। প্রদর্শনীটিতে ক্যাম্পাসের টুকরো টুকরো ছবি, অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসগুলোর চেতনা, নবীনদের ভাবনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, সাফল্য, সৌন্দর্য ও সম্ভাবনার খবর তুলে ধরা হয়েছে। লেখাগুলো পড়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ববোধ হয়।’

‘প্রদর্শনীর একপ্রান্তে নিজের লেখা দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম ফিচারটিতে চোখ পড়তেই ভীষণ ভালো লাগায় মন ভরে উঠলো। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। পাঠকদের উৎসাহ এবং ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উদ্দীপনায় ফিচার প্রদর্শনীর উৎসবটি হয়ে উঠেছে আনন্দময়’, বলেন তিনি।

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। চলতি বছরে সংগঠনটি সাত বছর পেরিয়ে ৮ম বর্ষে পদার্পণ করছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে সংগঠনটির দায়িত্বশীলরা।

গবিসাসের সভাপতি মোহাম্মদ রনি খাঁ বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন সংগঠন গবিসাস। বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক না হলেও কাজের চাপ বেশি থাকে। আমাদের ব্যস্ততার মধ্যেই থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক সংবাদ বাদেও বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী কাজগুলো আমরা সবার সামনে তুলে আনার চেষ্টা করি।’

‘আমরা প্রতিবছর ফিচার প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকি। সবসময়ই আমাদের দারুণ কিছু ফিচার থাকে। অনেক ফিচার জাতীয় পত্রিকাগুলোতে লিডে থাকছে৷ আমাদের ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা ভালো করছে, সামনে আরও ভালো করবে’, বলেন তিনি৷

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গবি/হাকিম মাহি