ক্যাম্পাস

বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’

রাত ৯টায় কল, বাসায় বিনামূল্যে ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ পৌঁছে দিয়ে আসলো টিম ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’।

‘জড়তা নয়, সচেতনতা প্রয়োজন’ এই স্লোগান নিয়ে বিনামূল্যে যেকোনো সময় মা-বোনদের অতি প্রয়োজনীয় একটি ব্যবহার্য জিনিস ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে রংপুরের একদল সাহসী, উদ্যমী তরুণদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’।

সাধারণত প্রত্যেক নারীই তাদের শারীরিক কারণে প্রতিমাসে ঋতুস্রাব নামক একটি অসহনীয় মাত্রার যন্ত্রণা সহ্য করেন। আর এর জন্য প্রয়োজন একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন। কিন্তু করোনা নামক মহামারির কারণে লকডাউনের এই পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ নারী পারছে না ঘরের বাইরে যেতে এবং সামাজিক অসচেতনতা এবং হেয় প্রতিপন্নতার ফলে অনেকেই মুখ ফুটে বলতেও পারে না তাদের এই প্রয়োজনের কথা। অথচ প্রতিটি নারীর জীবনবৃত্তে ঋতুস্রাব একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার।

আর তাই এই মহামারির সময়ে অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে রংপুর শহরের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’। কোনো মা-বোন যদি জরুরি প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন, তাহলে ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’ এর সদস্যরা সাথে সাথে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এসব প্রয়োজনীয়সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যায়।

সমাজের নারীদের প্রতি ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’ এর এই কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু কেন এই উদ্যোগ, তা জানতে আমরা কথা বলি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহতাসিম আবশাদ জিসানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকে আমরা বিভিন্নভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এবারে অন্যান্য সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি অসহায় নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভাবছি। কারণ নারীরা জড়তার কারণে এড়িয়ে যায় এই জিনিসগুলো। ফলে জরায়ু ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। তাই নারীদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। ইনশাআল্লাহ সব সময় মা-বোনদের পাশে আছি।’

তাঁদের এই মহৎ উদ্যোগে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘এসিআই লিমিটেড’।

করোনা মহামারির সূচনালগ্ন থেকেই ফ্রন্টলাইনে কাজ করে চলছে রংপুর শহরের এই সাহসী তরুণদের দল। তাঁদের সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে কেউ পড়ে স্কুল-কলেজে কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লকডাউনের শুরু থেকেই শহরের দুস্থ-অভাবী মানুষের সাহায্যের উদ্দেশ্যে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’ এর সদস্যদের ত্রাণ নিয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে ত্রাণ নিয়ে ছুটে চলা শুরু। সেই ছুটে চলার মধ্যে দিয়ে মহামারির তিনটি মাস অতিবাহিত করে ফেলেছে তারা রংপুর নগরীর অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।

করোনা মহামারির সূচনালগ্নেই তারা রংপুর শহরের নিম্ন আয়ের এবং অসহায় ৫২টি পরিবারে ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ শুরু করে।  করোনা মোকাবিলায় নগরীর বিভিন্ন দোকানের সামনে তারা ছক এঁকে দেয়। এছাড়াও শহরের ১২টি পয়েন্টে তারা জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ দেয়াল লিখন, পোস্টার বিতরণসহ নানারকম সচেতনতামূলক বিভিন্নরকম কাজ সম্পন্ন করেছে। রমজান মাসজুড়েই সংগঠনটি ১৫০০ এর অধিক মানুষের ইফতারের আয়োজন করেছে। তাঁদের স্লোগান ছিল ‘খেটে খাওয়া রোজাদার, পথেই পাবে ইফতার’।

পাশাপাশি ১০ মে ১০০ পরিবারের মাঝে তারা ১৫ দিনের ইফতারসামগ্রী তুলে দেয়। এর পরপরই ১৩ মে ‘ইস্পাহানী’ কোম্পানির সৌজন্যে নগরীর পীরগাছা উপজেলায় ৫০টি অসহায় পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয় সংগঠনটি।  পবিত্র  ঈদুল ফিতরের আগে আগে তারা ‘হাসিমুখে ঈদ’ নামক তাদের আরেকটি প্রজেক্টের মাধ্যমে শহরের অসহায় বেশ কিছু পরিবারের মুখে হাসি ফোটায় ঈদের বাজার করে দিয়ে। এমনকি মৌসুমি অভাবী ফল ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে তারা মৌসুমি ফল কিনেও তা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে।

এছাড়াও ‘কারুপণ্য লিমিটেড’ এর সহায়তায় তারা গত ১৩ জুন থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালা এবং পাশাপাশি পথচারীদের মাঝেও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে তাদের বর্তমান কর্মসূচি বহাল রেখেছে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ‘স্বপ্নপূরণ’ এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে কর্মক্ষম ৫০ জন মহিলাকে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া। চোখে একরাশ স্বপ্ন আর বুকভরা সাহস নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধে নেমেছে রংপুর শহরের এই একঝাঁক সাহসী তরুণ-কিশোরের সংগঠনটি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (প্রথম বর্ষ)। রংপুর/হাকিম মাহি