ক্যাম্পাস

‘শিক্ষার্থীদের ফি কমিয়ে সরকারি অনুদান বাড়াতে হবে’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রশাসনিক ও একাডেমিক দু’টি শাখা। অন্যান্য প্রয়োজনীয় দপ্তর নিয়ে গড়ে ওঠে এর পরিকাঠামো। এই প্রশাসনিক ও শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও সরকারি অনুদানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল খরচই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের জন্যই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের  অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহ আলম স্বাক্ষরিত বশেমুরবিপ্রবির ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কিত এক সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রকাশ করা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের পরিচালনা বাজেট ব্যয় ৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা যার সিংহভাগ খরচই বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সেবা কাজে। মোট আবর্তক ব্যয় (বেতন, ভাতা,  পণ্যসেবা ও গবেষণা ব্যায়) ধরা হয়েছে  ৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যন্ত্রপাতি,  যানবাহন, তথ্য প্রযুক্তি ও অন্যান্য মূলধন বাবদ ব্যয় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এই খরচ মেটাতে  ইউজিসি দিচ্ছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে দেওয়া হবে ২২ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন এসব তথ্য। শতকরা অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল দিচ্ছে মোট বাজেটের প্রায় ৪০.৭৩ শতাংশ। বাকী ৫৯.২৭ শতাংশ দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার।

বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি খরচই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের জন্যই। সমান ১২ হাজার শিক্ষার্থী  হিসেবে ধরে বশেমুরবিপ্রবি ২০২০-২১ অর্থ বছরের এই ৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা পরিচালনা বাজেট থেকে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু খরচ পর্যালোচনা করা যাক। বশেমুরবিপ্রবির ২০২০-২১ অর্থবছরের পরিচালনা বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মাথাপিছু বাৎসরিক মোট ব্যয় ৪৫,০১৬ টাকা । ১২ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পিছনে মাথাপিছু মাসিক খরচ ৩,৭৫১ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে শিক্ষার্থী প্রতি মাসে খরচ  প্রায় ১,৫২৮ টাকা। মাসিক মাথাপিছু খরচের বাকি দুই হাজার দুইশ তেইশ টাকা রাষ্ট্র খরচ করছে।

বছরে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এই আয়ের উৎস প্রধানত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বিভিন্ন ফি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীই নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে পড়তে আসে। অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বশেমুরবিপ্রবিতে তুলনামূলক বেশি ফি নেওয়া হয় বলে শিক্ষার্থীরা ফি কমাতে ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও তা কর্ণপাত করছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিমাত্রায় কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগে আন্দোলনের মুখে সাবেক উপাচার্যের পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীরা আশা করছিলেন বেতনসহ অন্যান্য ফি আনুপাতিক হারে কমবে। কিন্ত শিক্ষার্থীদের সেই আশা এখনো পূরণ হয়নি। বরং ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০অর্থবছরের তুলনায় এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা বেশি যোগান দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে খরচ করা হয়েছে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ এবছর ব্যয় করা হবে ২২ কোটি টাকা।

নানা সংকটে জর্জরিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের লকডাউনে ইতোমধ্যে নতুন সংকট সেশনজট যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুরনো ধাঁচে নতুন বাজেটে শিক্ষার্থীদের আশার প্রতিফলন না থাকায় পুরোনো সংকট আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। বস্তুত, শিক্ষার্থীদের ফি কমাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বাজেটে ঘাটতি পড়ে যাবে। তাই সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি কমানোর পাশাপাশি সরকারি অনুদান বৃদ্ধিও প্রয়োজন।

 

বশেমুরবিপ্রবি/মাহফুজ