ক্যাম্পাস

গুজবের দায় কার

এখন তথ্য আদান-প্রদান যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, গুজব রটনাও তেমনি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে বেশি। তথ্য বিকৃতি বা ভুয়া তথ্য প্রচারে কাউকে বেগ পেতে হয় না। একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসই যথেষ্ট। গুজব সমস্যা যে শুধু আমাদের দেশেই তা কিন্তু নয়। উন্নত দেশও এ সমস্যা সমাধানে হিমশিম খাচ্ছে।

এসবের জন্য সবচেয়ে বড় দায় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক উপকারে আসলেও নেতিবাচক দিক নেহাত কম নয়। এর পেছনে কারণ কী? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে অবাধ প্রবেশ। এখানে যা ইচ্ছা বলতে পারা যায়, যা ইচ্ছা করতে পারা যায়। সেন্সরশিপের কোনো ঝামেলা নেই।

গালাগালের ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল হয়ে গেছেন এমন নজির বেশি বৈ কম নয়। ফলে, দেখা যায় আজেবাজে কন্টেন্টের যতটা ভিউ, ভালো, কন্টেন্টের ভিউ তার ধারে কাছেও নেই। তাই এমন মাধ্যমে যখন গুজব ছড়ানো হয়, তখন খুব সহজে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পর্যায়ের সকলের কাছে তা পৌঁছে যায়। অনেকে বিশ্বাস করে বিভ্রান্তও হয়। মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যায় মাত্র একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে।

ওমুক-তমুক তৈরিতে মানুষের মাথা-রক্ত লাগবে। অমুক পাতা খেলে করোনা সারবে, তমুক ব্যক্তি ধর্ম, কর্ম, জাতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ইত্যাদি নানা প্রকার গুজবের উপদ্রব দেখা যায়। একটি মূলধারার গণমাধ্যম চাইলেই যা-তা লিখতে বা প্রচার করতে পারে না। তাকে ঘটনার গভীরে যেতে হয়। সত্যতা যাচাই করতে হয়। কিন্তু ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্টদের এত কাজ নেই। তাদের দরকার ভাইরাল করা, গুজব সৃষ্টি করা। এভাবেই গুজবের ফলন খুব ভালোভাবে বাড়ছে।

যারা গুজব রটাচ্ছে শুধু তাদেরই দোষ? একতরফাভাবে তাদের কী আমরা দোষী বলতে পারি? যার কাজ গুজব রটানোর, সে গুজব রটাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ কেন গুজবে বিশ্বাস করছে? এর পেছেন রয়েছে বিভিন্ন সময়ে মূলধারার গণমাধ্যমের নীরবতা। তাদের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস।

দেখা যায়, বিভিন্ন ইস্যুতে যখন গণমাধ্যম নীরব থাকে, তখন মানুষ নানাভাবে তথ্য খুঁজতে থাকে। কিন্তু তারা তথ্য পায় না। শেষে ক্লান্ত হয়ে তাদের বিশ্বাস ভর করে তথাকথিত গুজবের ওপর। তাই শুধু গুজব সৃষ্টিকারীদের ওপর দোষ না চাপিয়ে সবাইকে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে গুজব রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। মূলধারার গণমাধ্যমের ওপর যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে।

শিক্ষার্থী, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। 

চট্টগ্রাম/মাহফুজ/মাহি