ক্যাম্পাস

‘মানুষ আবার মানুষ হোক’ 

আমাদের একি দশা! দিন দিন কোথায় যাচ্ছি আমরা? কোথায় বিবেক, মানবিকতা, মূল্যবোধ আর মনুষ্যত্ব? জঙ্গলে ফেলে রেখে যাওয়া হচ্ছে বৃদ্ধা মাকে। করোনায় আক্রান্ত মানুষকে দেখা হচ্ছে ঘৃণার চোখে। মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যে পরিবারের লোকই অংশগ্রহণ করছেন না। লোপাট হয় করোনাকালের ত্রাণ! 

চিন্তা-চেতনা, বিবেক-বিবেচনা, কাণ্ড-জ্ঞান আর বিচার-বুদ্ধির ক্ষমতার কারণেই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তবে মনুষ্যত্ববিহীন এই মানুষই সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করতে পিছ পা হয় না। মানবীয় গুণাবলি তথা মানবিক আচরণ ও নৈতিক শিক্ষা না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না।

প্রেম-ভালোবাসা, দয়া-মায়া, উদারতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ধৈর্য, ত্যাগ, ক্ষমা, সহনশীলতা, সহানুভূতিশীলতা, সৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলা, বিনয়, ভালো চিন্তা ও ভালো ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়। দান করা, দয়া দেখানো, ক্ষমাশীল হওয়া, সত্য প্রতিষ্ঠা করা, অহিংসা লালন করা, পরোপকার করা পূণ্যর কাজ হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু সবাই এসবকে প্রধান কাজ বলে গ্রহণ করে না।

মানুষের ভেতর ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক। তবে এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, উগ্রতা, স্বার্থপরতা এবং ক্রোধ প্রভৃতি পরিহার করে ভালোকে বেছে নেওয়াই মনুষ্যত্বের কাজ। মানুষ অন্তস্থলে এই সব ধারণ করলে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায়। তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না। মানুষ হয়ে যায় জীব-জন্তুর মতো। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি, আধিপত্য বিস্তার, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অপহরণ, দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, ইভটিজিং, প্রতারণা, চাঁদাবাজি এবং ঘুষ ইত্যাদি মনুষ্যত্ব লোপ পাওয়ার অন্যতম কারণ।

নিজের বিরুদ্ধেই প্রতিনিয়ত যুদ্ধে নামছে মানুষ। সেই যুদ্ধে মরছে তাদের মূল্যবোধ। হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতাও। অন্ন-বস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব বড়। মানুষ যতদিন পর্যন্ত এই বোধটি ধারণ করবেন না, তত দিন পর্যন্ত কেউ মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারবে না। তাদের মধ্যে সেই শিক্ষা প্রাথমিক পর্যায় থেকেই দিয়ে দিতে না পারলে কখনোই মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে না। কেননা শিক্ষার আসল কাজই হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি। শুধু জ্ঞান দান নয়। জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায়মাত্র।

মানবতা বা মনুষ্যত্ববোধ না থাকলে মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাৎ থাকে না। মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব থাকতে হবে। কেননা মনুষ্যত্ব মানুষের জীবনকে দীপ্তিময় শিখার মত উজ্জ্বল করে। এর মাধ্যমে সে নিজেকে আলোকিত করার পাশাপাশি অন্যদেরও আলো দিতে পারে। তাই সকল মানুষের উচিত মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। অন্তরের প্রশান্তি ও কল্যাণ কামনা নিয়ে মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব জেগে উঠবে। দূর হবে সব বিবাদ। মানুষ আবার মানুষ হবে। এটাই প্রত্যাশা। 

লেখক: শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

খুবি/মাহফুজ/মাহি