শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকাটাই বেঁচে থাকা নয়। ভালোভাবে বাঁচতে হলে কিছু উপাদান প্রয়োজন। সেই উপাদানের মধ্যে প্রধান হচ্ছে একজন মানুষের মানসিক শান্তি বা মনের শান্তি। মানসিক শান্তি বলতে আপাতদৃষ্টিতে মনের স্থিতিশীলতাকেই বোঝায়। কিন্ত জীবনে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রতিদিনকার নানা ভালো বা মন্দ উপাদানের উপস্থিতিতে আমাদের মনের সেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়৷ আর তখনই শুরু হয় মনের অস্থিতিশীলতার চাপ, সেই চাপে আমরা ধীরে ধীরে পিষ্ট হতে থাকি। আর তখন থেকেই শুরু হয় যাবতীয় মানসিক অশান্তির সূচনা।
শুরু হয় নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ, এই যুদ্ধ মনের সাথে যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধের জন্য কখনোই একজন ব্যক্তি শুধু নিজেকে দোষারোপ করতে পারে না, কারণ একজন ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ব্যক্তি চাইলেও একা কখনোই নির্ধারণ করতে পারে না। সেই পরিস্থিতি নির্ধারিত হয় ব্যক্তির অবস্থান, তার চারপাশের মানুষদের ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
জীবনকে আমরা একটি খেলার মাঠ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। এই মাঠে সংঘটিত খেলাগুলোতে প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্যতা আর নতুনত্বের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই একটি খেলার মাঠের খেলোয়াড় কেবল একজন! এখানে হেরে যাওয়া বা জিতে যাওয়া সবকিছুই নিজের সাথে। নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া যার যত বেশি, নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ যার যত যৌক্তিক সে তত বেশি সফল।
কিন্তু এই খেলার মাঠেই অনেক সময় নিজের অজান্তেই এবং নিজের হস্তক্ষেপেই, নিজের ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের প্রবেশ ঘটে। এদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ কিছু ক্ষেত্রে জীবনের জন্য কিছুটা আশীর্বাদস্বরূপ হলেও বেশিরভাগ মানুষই জীবনকে পদে পদে বিপর্যস্ত করার জন্যই প্রস্তুত থাকে! এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে তা একজন ব্যক্তির জন্য মানসিক দাসত্বে পরিণত হতে পারে।
কিছু মানুষ নিজের জীবনকে সুন্দর করার কাজে যতটা না সময় দেয়, তার চেয়ে বেশি সময় বা পরিশ্রম দেয় অন্যের জীবন নিয়ে মাতামাতি করার পেছনে! তাই একটা পর্যায়ে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষকে সরিয়ে রেখেই চলতে হয়। কিন্তু এই ব্যাপারটি বলা বা ভাবা যতটাই সহজ, এটি করা তার চাইতেও কঠিন, কিছু ক্ষেত্রে তা অসম্ভব। এটি করার জন্য মনের জোর বা ইচ্ছা সবকিছুই অনেক উচ্চ স্তরে থাকা প্রয়োজন। আর সেই মানসিক জোর আসে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে বোঝার মধ্য দিয়েই।
আমরা বর্তমানে যেই সমাজে বাস করছি, সেখানে স্বার্থপর মানুষের ছড়াছড়ি আগেও ছিল, দিন দিন আরও বাড়ছে। তবুও এর মধ্য দিয়েই কিছু মানুষের জন্যই আমরা বাঁচি, কিছু মানুষের সংস্পর্শে আমাদের জীবন আকর্ষণীয় হয়। বেঁচে থাকার মতো উত্তেজনা আর কিসে আছে! এই বেঁচে থাকার জন্যই সবার আগে প্রতিটি মানুষকেই তার নিজস্ব জগৎকে চিনতে হবে।
প্রতিটি মানুষেরই প্রয়োজন নিজে ভালো থাকা, নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে সময় দেওয়া, নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া, নিজেকে বুঝতে শেখা। কারণ নিজে ভালো না থাকলে কখনো অপরকে ভালো রাখা যায় না, ভালোবাসা যায় না।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ (৩য় বর্ষ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
কুবি/মাহি