ক্যাম্পাস

জলকেলিতে মত্ত সদরঘাটের বাতি 

পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সদরঘাট। করোনা মহামারির প্রভাবে স্বরূপ হারিয়ে ফেলেছিল। বহুদিন ধরে সেখানে মানুষের কোলাহল ছিল না। তবে এখন ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে দেশের ব্যস্ততম এই নৌঘাট।

নদীর পাড় ঘেঁষে সারি সারি সুউচ্চ অট্টালিকা। এসব অট্টালিকার লাল-নীল-সবুজ বাতি থেকে নিঃসৃত নানা বর্ণের আলো নদীর বুকে জলকেলিতে মত্ত। আলো ঝলমলে সেই নদীর জলে ফুটে ওঠে সদরঘাটের প্রতিচ্ছবি। অসংখ্য লঞ্চ ঘাটে ভিড় করে আছে। ডিঙ্গি নৌকাগুলো যাত্রী পারাপার করছে। বুড়িগঙ্গার দু’ধারের শত শত ভবনের নানা রঙের বাতি মোহনীয় করছে রাতের সদরঘাটকে। সেইসব আলো পড়ছে নদীর জলে। জল স্বচ্ছ না থাকলেও মৃদু স্রোতে আলোর খেলায় মেতে উঠছে বুড়িগঙ্গা। ভেসে বেড়ানো দু’একটি নৌকার বৈঠায় আলোর ঝলকানি আরও মোহনীয় করে তুলছে চারপাশ।

সদরঘাট আদি ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। এই বন্দর ঘিরে উনিশ শতকে ব্যবসায়িক জনপদ গড়ে ওঠে এখানে। এখনো এটির গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রয়েছে। এর খুব কাছেই রয়েছে নানা রকেমর পুস্তক প্রকাশনা কেন্দ্র। বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসান মঞ্জিল, বিউটি বোর্ডিং, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বলধা গার্ডেন রয়েছে এখানে। রয়েছে মাছ ও ফলের সুবিশাল সব আড়ৎ।

দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরের নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মূলকেন্দ্র এই সদরঘাট। যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে এটি অন্যতম ব্যস্ততম নৌ-বন্দর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সদরঘাটের শোরগোলও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিকেল হলেই বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে লঞ্চ টার্মিনাল। সন্ধ্যা নামতেই গন্তব্যের উদ্দেশ্য টার্মিনাল ত্যাগ করতে শুরু করে নৌযানগুলো।

সদরঘাট এমন একটি জায়গা যা কখনো নীরব থাকে না। এই ঘাট থেকে মোট ৪৫টি রুটে নৌযান চলাচল করে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এলাকাগুলো যেমন- পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাদঁপুর, হাতিয়া, মুলাদি, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভান্ডারিয়া, সন্দ্বীপ, বাগেরহাট, আমতলী, মোংলা ও খুলনাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ ও স্টিমার ছেড়ে যায়।

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, হকারদের দৌরাত্ম ও কুলিদের হয়রানিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পদে পদে ভোগান্তি যেন এখানে চিরচেনা। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে এমন ভোগান্তি ছাড়াও সদরঘাটের প্রবেশ পথগুলোতে বিশৃঙ্খলা এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সদরঘাটের এসব চিত্র বদলে গেছে অনেকটা।

ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে টার্মিনালজুড়ে ৩২টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দিয়ে সবসময় নজরদারি করা হচ্ছে। এর সুফল পাচ্ছেন যাত্রীরা। এ ধরনের পদক্ষেপে অনেকটা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন তারা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জবি/মাহফুজ/মাহি