ক্যাম্পাস

দুর্গাপূজা: কেমন প্রস্তুতি বেরোবি শিক্ষার্থীদের  

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। একে কেন্দ্র করে প্রতিবছর সাজসাজ রব পড়ে যায় সারাদেশে, আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ পূজা উপলক্ষে আনন্দের কোনো সীমা থাকে না। কিন্তু এ বছর করোনা মহামারির মধ্যে কেমন প্রস্তুতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের, তা জানাচ্ছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেএম হিমেল আহমেদ। 

সৈকত নাথ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ 

সনাতনদের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী একটি পূজা। এটিকে বলা হয়ে থাকে সার্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। সার্বজনীন কথাটির মানে হচ্ছে সবার জন্য কল্যাণকর, সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত। সাধারণত প্রতিবছর আশ্বিন মাসে পূজা হয়। সব ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এ পূজা উদযাপন করে থাকেন।

মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবীর আগমনী বার্তার নির্দেশ পাই আমরা, তবে মূল পূজা শুরু হয় ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে এবং দশমীর মধ্যে দিয়ে দেবীর বিদায় ঘটে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পূজা অর্চনা, অঞ্জলি প্রদান, আরতি, ও বিভিন্ন কাজই করা হয়ে থাকে। তাছাড়া পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করা হয়। সর্বোপরি পূজার কটি দিন খুবই আনন্দঘন অবস্থায় কাটে।

প্রীতম রায়, মার্কেটিং বিভাগ

শরতের সাদা কাশফুল উড়ে যায়, শরতের বাতাসে আর দুর্গাপূজার ঢাকের বাজনা মনে হচ্ছে কানের মধ্যে উতলা করে তুলছে। শুধু মন জুড়ে দিন গণনা আর প্রতীক্ষা ও সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। সবাইকে জানাই শারদীয় দুর্গাপূজার আগাম শুভেচ্ছা। আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা।

অপেক্ষার পালাবদলে পূজার আনন্দঘন মূহুর্তে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ, তখন না পূজা আসছে আসছে বলে অনেকটা ভালো লাগা ও শিরশির অনূভুতি কাজ করে এই বুঝি পূজা চলে আসল। আসছে বছর আবার হবে, সেই দিনটাই চোখের পলকে আজ চলে এসেছে। 

এবারের পূজাটা হবে ভিন্ন আয়োজনে। কারণ পৃথিবীর এই মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই হবে ভিন্নধর্মী আয়োজন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। চারদিকে দেবী দুর্গাকে বরণ তার সঙ্গে প্রতিমা শিল্পীদের প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়ে ব্যস্ত মুহূর্ত, কোথাও প্রতিমা বানানো সমাপ্ত, কেউবা নকশা তৈরিতে ব্যস্ত, কেও প্রতিমাকে ফুটিয়ে তুলতে হরেক রঙের ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা পূজা মণ্ডপের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে চলছে বাহারি ডিজাইন আর নতুন পোশাকের পরিক্রমা।

পূজা মানেই উপহারের উৎসব, খুশি ও আনন্দ। প্রতিবছর দেবীর আরাধনার জন্য কতই না পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এবারের পূজাটা ভিন্ন। এ বছর পূজা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু মনে একটা আতঙ্ক কাজ করছে সবারই। পূজা মণ্ডপে একসঙ্গে অনেক মানুষের ভাবনা আর ভিড়। 

প্রতিবছর মায়ের সঙ্গে পূজা, আর এদিক-ওদিক ঘুড়ে বেড়িয়ে পূজা দেখার আনন্দতো রয়েছেই। প্রত্যেক বছর পূজার আয়োজনে যেমন সাজসজ্জা থাকে, তেমনি থাকে নানা ভোগ নিবেদন প্রসাধনী- মায়ের হাতে তৈরি নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু, দুধের সন্দেশ, মোয়া-মুড়কি, বাহারি রঙের পিঠা, নারিকেলের শুকনো আচারী আরও অনেক রকমের আয়োজন রয়েছে। এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গাকে প্রসাদ নিবেদন করা হয়। 

পুষ্পিতা রায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ 

দুর্গাপূজা বাঙালির সার্বজনীন  উৎসব। গোটাবিশ্বের মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এতে অংশগ্রহণ করেন। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব। দুর্গা পূজা মানে আমার কাছে অনেক কিছু। পূজার অনেক আগে থেকেই কী করব না করব তার পূর্ব পরিকল্পনা করি। মজার বিষয় হলো ছোটবেলার মতো এখনও নতুন জামাকাপড়ের জন্য অপেক্ষা করি এবং সেগুলো  কাউকে দেখাই না। আগের দিনের  হিন্দু রাজারা দুর্গাপূজা ১০ দিন করত, কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন ৫ দিন উৎযাপিত হয়। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী। যদিও পূজা জমজমাট হয় ৮মী ৯মী ১০মীর দিন, তারপরেও পূজার প্রত্যেকটা দিনে আনন্দের কোনো সীমা থাকে না।  

পূজার সকালে অঞ্জলি দেওয়া, মণ্ডপে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা, বিকেলে ঘোরাঘুরি সঙ্গে ভুঁড়িভোজতো আছেই, সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যাআরতি এ এক অন্যরকম অনুভূতি, যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। দশমীর দিন সিঁদুর খেলা, তারপর মায়ের বিদায়। কোনো কিছু শুরু হলে শেষতো আছেই, তাই একটা খারাপ লাগা কাজ করে সবার মাঝে। 

যদিও এবার আমরা সবাই অদৃশ্য শত্রু করোনা মহামারির কাছে বন্দি, তাই সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের পূজা উৎযাপন করা উচিৎ। হয়তো প্রতিবারের মতো ধুমধাম করে পূজা উৎযাপন করা সম্ভব নয়, তারপরেও ছোট করে হলেও পূজাতো হবেই। কারণ দুর্গাপূজা শুধু পূজা নয়, এটা বাঙালির আবেগ।

শিউলী রানী দাশ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ। পূজার বিশেষ আকর্ষণ মানেই নতুন পোশাক। বলতে গেলে সারাবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করা। কারণ, অন্য সময়ের চেয়ে পূজার পোশাক মানে অন্যরকম বিশেষ কিছু। দুর্গা পূজার অবিচ্ছেদ্য অংশ ঢাক। আর সেই ঢাকের শব্দে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে। তারপর স্নান করে নতুন পোশাক পরে মন্দিরে গিয়ে ফুল দেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে গিয়ে আনন্দ করা, রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা। আবার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পূজা দেখা। আরতি করা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে যোগদান করা। সেই মজার তুলনা নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই স্মৃতি। 

এবার পুরো বিশ্ব ছেয়ে গেছে মহামারি করোনাভাইরাসে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘ লকডাইনের ধাক্কায় এবার পূজা হবে কি-না, একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। পরে পূজা কমিটি জানিয়েছে, পূজা হবে, কিন্তু সব বিধিনিষেধ মেনে, থাকবে না কোনো আলোকসজ্জা, মেলা, আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিবারের ন্যায় এবছর তেমন আর ঘোরাঘুরি হবে না, তেমন মজা হবে না। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে পূজা কাটাতে পারবো, এটাই সব চেয়ে আনন্দের।

উত্তম কুমার রায়, লোকপ্রশাসন বিভাগ 

আমরা গ্রামের মানুষ। গ্রামের পূজা আর শহরের পূজার মধ্যে পার্থক্য থাকে। সম্পূর্ণ একটা গ্রাম নিয়ে একটি পূজা হয়। কখনো দুইটি। মহালয়ার পর সবাই পূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মন্দির রঙ করা, মন্দির সাজানো, ঠাকুর বানানো, ঢাকি ঠিক করা, ব্রাহ্মণ ঠিক করা, পূজার উপাচার কেনা-কাটা এবং এসব কিছুর জন্য চাঁদা তোলা। গ্রামে প্রত্যেক পরিবারের নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা ধরা হয়। নির্দিষ্ট কিছু দিনে চাঁদা তুলতে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকবার আমি চাঁদা তোলায় অংশ নিয়েছিলাম, সেখানেও একটা সুপ্ত আনন্দ আছে। সবাই তা বুঝতে পারে না।

দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রতিমা। এসময় কুমারপাড়াগুলোতে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়ে যায়। আমাদের বাড়ির পাশেই মন্দির। প্রতিমা তৈরির কারিগররা প্রতিমা তৈরি করেন। ৫-৬ দিন লাগে মূলকাঠামো তৈরি করতে। তারপর শুকানো হয়। শুকানোর পর শেষ প্রস্তুতি টানা হয়। স্বচক্ষে প্রতিমা বানানো অনেকবার দেখেছি। ভালো লাগতো, আনন্দ লাগত, ইচ্ছা জাগত প্রতিমা বানানোর। 

পূজার অংশ হিসেবে আমাদের গ্রামে একটি খেলা প্রচলিত আছে। আমরা বলি নারিকেল খেলা। এখানে শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়। একটি গর্তে একজনকে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং তার কোলে নারিকেলটি রেখে শক্ত করে ধরতে বলা হয়। অপর প্রতিযোগীকে নারিকেলটি বের করে নিতে হবে। যে যত বেশি সময় ধরে রাখবে, সে জয়ী হবে। 

শেষে বলবো, দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা এবার যেন পৃথিবীর এ দুরবস্থা মোচন করেন। সবারই যেন মঙ্গল হয়। পৃথিবী যেন আগের মতো সচল হয়ে ওঠে। এই কামনাই থাকবে।

বেরোবি/মাহি