ক্যাম্পাস

দেশ-বিদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে শ্রেয়া

শ্রেয়া ঘোষ, একজন কলেজ শিক্ষার্থী। সে পড়ছে শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজে একাদশ শ্রেণিতে। তার বেড়ে ওঠা নীলফামারীতে। ছোটবেলায় পড়াশোনার বাইরে তেমন কিছু করা হয়নি।

একদিন হঠাৎ করেই উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শ্রেয়া। সেখান থেকেই তার পথচলা শুরু! উপস্থিত বক্তৃতা, নির্ধারিত বক্তৃতা, গল্প বলা, লেখালেখি, বিতর্ক এবং আবৃত্তিতে জেলা, উপজেলা এবং বিভাগ মিলে শতাধিক পুরস্কার পেয়েছে সে। জাতীয় বিতর্ক উৎসবে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। সাংবাদিকতায় পেয়েছে ৪টি পুরস্কার!

২০১৮ সালে নীল.ডিএফ থেকে পেয়েছে সেরাদের সেরা পুরস্কার এবং সেরা সংগঠকের পুরস্কার। ২০১৯ সালে নীল.ডিএফ থেকে পেয়েছে সম্মাননা! ২০১৭ সালে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সম্মাননা পেয়েছে সে। ২০১৯ সালে এসডিএস-এর থেকে পেয়েছে সম্মাননা! তার ঝুলিতে জেলা, উপজেলা এবং বিভাগ পর্যায়ে রয়েছে ১৫টি পুরস্কার। জাতীয় পর্যায়ে বারোয়ারি বিতর্ক এবং ইংলিশ পাবলিক স্পিকিংয়ে রয়েছে ৫টি পুরস্কার! ইউনিসেফের চাইল্ড পার্লামেন্টে শ্রেয়া নীলফামারী ২ আসন থেকে সংসদে বক্তব্য দিয়েছে! 

ইউনিসেফের ইউ রিপোর্টার হয়েও কাজ করছে সে। হ্যালো বিডিনিউজে শ্রেয়ার শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে! পাবলিক স্পিকিংয়ের ট্রেইনার হিসেবে শত শত তরুণদের দক্ষ করে তুলছে সে।

শ্রেয়া বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলায় পাবলিক স্পিকিং সম্পর্কে কর্মশালা দিয়ে এবং সেখানে সে যে পারিশ্রমিক পেয়েছে, সেটা কাজে লাগিয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য। শিশুদের নিয়ে কাজ করে শ্রেয়া। তার-ই ধারাবাহিকতায় শ্রেয়ার মাথায় একদিন হঠাৎ করে আসে সুবিধাবঞ্চিত মেধাবীদের জন্য কিছু করা উচিৎ। এখন যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। সে ঝটপট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয় যে, সে একটি সংগঠন চালু করতে ইচ্ছুক, যেখানে প্রান্তিক পর্যারের মেধাবীদের নিয়ে কাজ করা হবে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এক ঝাঁক তরুণ কাজ করবার আগ্রহ প্রকাশ করে।

১৮ জুন তারা তাদের পথচলা শুরু করে, সংগঠনের নাম শ্রেয়া দেয় ‘আলোর সন্ধানী’। মূলত সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে আলো ছড়িয়ে কিংবা তাদের প্রতিভাগুলো বিকাশ করার সু্যোগ করে দেওয়ার জন্য এ নাম দিয়েছে সে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে যেহেতু মাঠপর্যায়ে কাজ করা সম্ভব নয়, তাই অনলাইনের মাধ্যমেই দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে বিনামূল্যে কর্মশালা। যোগ্য নেতৃত্ব, সহজে ইংরেজি বলা, যোগাযোগ দক্ষতা, পাবলিক স্পিকিং, রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং এবং বিভিন্ন বিষয় রয়েছে বিনামূল্যে কর্মশালা দেওয়ার মধ্যে। কর্মশালাগুলো দেওয়া হচ্ছে সেইসব সুবিধাবঞ্চিতদের, যারা আগে কখনও এসব কর্মশালা পায়নি। 

পুরো একমাস বিনামূল্যে সারাদেশে কর্মশালা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রেয়া আমেরিকা, ফিলিপাইন এবং ভারতেও করেছে এ কর্মশালা। ভারত এবং ফিলিপাইনে রয়েছে আলোর সন্ধানীর প্রতিনিধি। আলোর সন্ধানীর পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের পড়াশোনার ব্যাপারেও শ্রেয়া ভেবেছে, সে শ্রেয়া'স লার্নিং ক্লাসরুমের মাধ্যমে বিনামূল্যে ভিডিও আকারে শেখাচ্ছে। 

তরুণদের স্বচ্ছ পথে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে শ্রেয়া। সে বলে, ‘এই রুদ্ধশ্বাস সময়ে তরুণরা আলোর সন্ধানীতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মহৎ কর্মের সঙ্গী হচ্ছে, যা তাদের জীবন যুদ্ধে আরেক ধাপ এগিয়ে দেবে। লকডাউনে তরুণরা শ্রেয়ার কাছে যোগ্য নেতৃত্ব এবং জনগণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কৌশল রপ্ত করছে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

কুমিল্লা/মাহি