ক্যাম্পাস

ভোরের শিশিরে হেমন্তের ডাক

‘দুয়ারে দাঁড়ায়ে গাড়ি, বেলা দ্বিপ্রহর...’। শীতের গাড়ি নিয়ে প্রকৃতিও আমাদের দুয়ারে। এক্কেবারে প্রস্তুত। আমাদের কেবল সেই গাড়িতে উঠে বসা। তারপর বেরিয়ে পড়া। যেদিকে দু’চোখ যায়। তারমধ্যেও কথা আছে। যেদিকে দু’চোখ গেলেই হবে না। দৃষ্টির সীমানায় থাকা চাই প্রকৃতি। তবেই না টের পাওয়া যাবে শীতের আগমনী বার্তা। ইট-পাথরের এই শহরে কান পাতলেও শোনা যাবে না, শীতের আগমনী গান। চোখে পড়বে না কুয়াশাভেজা ঘাস বা ‘একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু’।

তাহলে উপায়? উপায়তো আছেই। কেবল দরকার ইচ্ছেটা। সন্তানদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। ওদের সঙ্গে করে করোনাকালীন সব প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। খুব বেশি নয়, দু’তিন দিনের জন্য। আপনারই মায়াময়, স্মৃতিময় গাঁয়ে চলে যেতে পারেন। জীবনের অনেকটা সময় কাটানো প্রিয় সেই গ্রাম। বাপ-দাদার ভিটেমাটি। আপনার শেকড়। গ্রামের ক্ষেতের আল ধরে, কুয়াশাভেজা ভোরে ক্ষাণিকটা হেঁটেও নিতে পারেন। সেই ছোটবেলার মতো। সাথী করে নিন আপনার সন্তানকে। শক্ত করে ওর হাতকে ধরুন। যেমনটি আপনার ছোটবেলায় বাবা ধরে রেখেছিলেন আপনার হাত।

হতে পারে, গ্রাম আর গ্রাম নেই। সময়ের প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে বদলে গেছে গ্রামের অনেক কিছু। আমাদের অনেকের হয়তো গ্রামের সঙ্গে সে নিবিড় যোগাযোগটা আর নেই। জীবনের প্রয়োজনে এখন শহরমুখী আমরা। তাই বলে থেমে নেই প্রকৃতি। ঋতু পরিক্রমায় সে তার ডালি সাজায়। আমরা সে ডালি কেউ কেউ দু’হাত ভরে গ্রহণ করি। কেউ করি না, বা করতে পারি না। 

বর্তমানে শীত কড়া নাড়ছে দরজায়। গাছের পাতারা সবুজে সবুজে সেজেছে। শীতের সবজির বীজ বপন শুরু হয়ে গেছে। কদিন পরই পেয়ে যাব টাটকা সেসব সবজি। জীবনের চোখ-কান খোলা রেখে প্রকৃতির দিকে একটু উঁকি দিন। দরজা খুলে বেরিয়ে আসুন।

একান্তই যদি গ্রামে যেতে না পারেন, তাহলেও মন খারাপের কিছু নেই। কোনো এক ছুটির দিনে, খুব ভোরে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ুন। ঢাকার আশেপাশে কোনো একটি এলাকায় চলে যান। খাল বা নদীর পাড় ঘেঁষা ছোট কোনো গ্রাম। তার খুব কাছেই হয়তো হাঁট বা বাজার। সেখানেই নেমে পড়ুন গাড়ি থেকে। গ্রামের কুয়াশাভেজা ঘাসের রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে নিন একটু সময়। মাটির স্পর্শ নিন। মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিন। চোখ মেলে দেখুন, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ। সে মাঠে কৃষকেরা কাজ করছেন। নদী বা খালে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জেলে। গাছে গাছে ওড়াউড়ি করছে হরেক কিসিমের পাখি। খুব মন দিয়ে, কান পেতে সেসব পাখিদের গান শুনুন। সেলুলয়েডের ফিতায় সেসব দৃশ্য বন্দি করে নিন। সন্তানদের প্রাণভরে নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে দিন।

পাশের ছোট্ট বাজারে সকালের খাবারটা সেরে নিতে পারেন। সেই বাজার ঘুরে দেখুন। স্মৃতির অনেক কিছু সামনে এসে দাঁড়াবে আপনার। আর শহরে বেড়ে ওঠা আপনার সন্তানরা বিস্ময়ে সেসব দেখে অভিভূত হবে। বাজার থেকে কিনে নিন টাটকা শাক-সবজি। সুযোগ থাকলে নৌকা ভাড়া নিয়ে দু’চার ঘণ্টার জন্য বাজারের পাশের খাল বা নদীতে বেরিয়ে পড়ুন। 

সময় গড়াবে, তার গতিতে। এবার ফেরার পালা। স্মৃতিতে বেশ কিছু অন্যরকম আনন্দ নিয়ে ফেরার আয়োজন করুন। এরমধ্যে টের পাবেন, জীবনের ট্যাংকি ভরে উঠেছে আনন্দের ফুয়েলে। এ আনন্দ, এ বিস্ময়, এ প্রাপ্তি, অনেক দিন ধরে আপনার আর আপনার সন্তানের জীবনের খোরাক হবে। এসব স্মৃতি মলিন হওয়ার আগেই আবারও বেরিয়ে পড়বেন, কোনো একদিন। অন্য কোনোখানে। আবারও কোনো এক অজানা গাঁয়ে…। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

ঢাকা/মাহি