ক্যাম্পাস

সন্তানকে সময় দিন

আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত। যে শিশু আজকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই শিশুটিই হয়তো আগামীর বিশ্বের জন্য নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হবে। শিশুদের তুলনা করা চলে কুমারের হাতের মাটির ন্যায়। কুমার যখন মাটি কাঁচা অবস্থায় থাকে, তখন খেয়াল খুশি মতো আকৃতি দিতে সক্ষম। তেমনি শিশুর বিকাশে মা-বাবার ভূমিকাও তেমন। পরিবারের সঠিক পরিচর্যাই পারে একটি শিশুকে সুন্দর, স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে পরিচালিত করতে।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে অবসর সময় কাটানো মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে একেক জন তার নিজস্ব গণ্ডিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মা-বাবা দুজনই অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত, এমন পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলক বেড়ে যাচ্ছে। সন্তান জন্মের পর লালন-পালনের জন্য পৃথকভাবে গৃহকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা যেন আরও অত্যাধুনিক হচ্ছে। 

সন্তান মা-বাবার যথেষ্ট আদর সোহাগ না পেয়ে বেড়ে উঠছে অন্যের হাত ধরে। মা-বাবার অবর্তমানে সন্তান লালন পালনে গৃহকর্মী অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুদের উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। যার চিত্র পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরালও হতে দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে শিশুর মানসিক বিকাশ।

কালের পরিক্রমায় এখন একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলক কমে যাচ্ছে বহুগুণে। বেড়ে যাচ্ছে পৃথক পরিবার। পৃথক পরিবারে সদস্য সংখ্যা কম থাকে। সদস্যরা যার যার মতো ব্যস্ততাকে আলিঙ্গন করায় পরিবারের সন্তানও বেড়ে উঠছে একাকিত্বতাকে সঙ্গী করে। সারাদিন সময় পার করছে টেলিভিশনের পর্দায় কার্টুন দেখে, মোবাইলে গেমস খেলে। এতে ক্ষতি হচ্ছে মানসিক ও শারিরীক উভয় দিক। বেড়ে উঠছে চার দেয়ালের বন্দি শিবিরে। 

মা-বাবা যদি সন্তানের খেয়াল রাখতে অক্ষম হয়, তাহলে সে সন্তান ধ্বংসের অতল গহব্বরে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণে। লেখাপড়ায় হয়ে ওঠে অমনোযোগী। ধ্বংস হয় মানসিক বিকাশের সবগুলো দ্বার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় চরিত্র হরনের নানা দিক্-দিগন্ত। হাতছানি দিয়ে ডাকে রঙ্গিন দুনিয়া। খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ তাকে করে তোলে আরও বেশি বেপরোয়া। নেশাগ্রস্ত হয়ে ঘরে ফিরে হরহামেশাই। সম্মান করতে শিখে না কাউকেই। 

যে শিশুটির সম্ভাবনা ছিল বিশ্বকে জয় করার। সেই শিশুটিই আজকে হয়ে উঠেছে সমাজের আতঙ্ক। জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে৷ 

তাই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হলেও তাদের সবসময় নিজের শত ব্যস্ততার ভেতরেও সময় দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে তার সব প্রকার কর্মকাণ্ড। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে ভূমিকা রাখতে হবে সর্বোচ্চ। তাহলে হয়তো সন্তানের ভবিষ্যত আরও বেশি উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশ পাবে একজন আদর্শবান সুনাগরিক, জাতি পাবে আশার বাতিঘর। 

নরসিংদী/মাহি