জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায় সদ্য বিবাহিত চট্টগ্রাম নগরীর শাহ জাহান (৩০)। একদিনের ব্যবধানে একই শ্বাসকষ্ট ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান তারই আপন ভাই শাহ আলম (৩৫)। একদিনের ব্যবধানে দুই ভাইয়ের এমন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু পুরো এলাকাকে আতঙ্কিত করে তোলে।
এ অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনরা কেউ তাদের কাছে আসেনি। জানাজা, দাফন-কাফন নিয়ে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনকেও পাওয়া যায়নি জানাজা-মাটি দেওয়ার জন্য। ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে লাশের শেষকৃত্য করতে ছুটে আসেন গাউসিয়া কমিটি নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ গোসলের পর কাফন পরিয়ে জানাজা এবং শেষে দাফনও করেন তারা।
ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফন ও সৎকারে ছুটে যাওয়া বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। করোনাকালের এই ভয়াল সময়ে অনন্য এক মানবিক সংগঠন গাউসিয়া কমিটির এই সহযোগিতা সবার কাছে উপমা হয়ে থাকবে।
৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৫৩৬ জন ও শুধু চট্টগ্রামে ১২১০ জনকে দাফন-কাফনে সহায়তা করে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। পাশাপাশি তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ২২ জনকে সৎকার কাজে সহায়তা করে।
লাশ দাফনের পাশাপাশি গাউসিয়া কমিটির নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা দিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোলাকালে লকডাউন চলাকালীন যখন শ্রমজীবী মানুষের কোনো কাজ ছিল না, তখন তারা খাদ্য বিতরণ করেও দুস্থ মানুষকে সহযোগিতা করেছে।
এ কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা থাকলে তারা এই মানবিক কাজকে আরও বৃহৎ পরিসরে রূপ দিতে পারতাম। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পিপিইসহ সবাইকে দাফনের কাজ সম্পন্ন করছি।’
গত ১৫ মার্চ গাউসিয়া কমিটির পক্ষ থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফন-কাফনের আগ্রহের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কথা বলে ও পরামর্শ নিয়ে তারা এই কাজে অংশগ্রহণ করে। এই সংকটময় মুহূর্তে এমন কাজ সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাঃ) এই গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে এই কমিটি মানবিক কাজে নিয়োজিত। এই সংকটেও দেশের প্রতিটি জেলায় গাউসিয়া কমিটির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন হাজার কর্মী লাশ দাফন ও সৎকার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চবি/মাহি