ক্যাম্পাস

শতভাগ স্কলারশিপে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, কীভাবে?

আপনি শতভাগ বৃত্তি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী? বিদেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়ালেখা করছেন- তারা কিভাবে আবেদন করেছেন, ও তারা কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন?

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী। ইউনেস্কোর ২০১৯ সালের এক হিসেব বলছে, সে বছর এদেশ থেকে ৫০,০০০ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিতে দেশের বাইরে গেছেন। তবে বিদেশে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অনেকের জন্যই শিক্ষার ব্যয়ভার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আশার কথা হচ্ছে, সেখানকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের জন্য রয়েছে নানা ক্যাটাগরির স্কলারশিপ। এ নিয়ে গবেষণাধর্মী তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি।

ইউনেস্কোর ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রথম পাঁচটি দেশ হলো-যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও কানাডা। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃত্তি দিয়ে থাকে। হাঙ্গেরি, চিনা, জাপান কিংবা কমনওয়েলথ স্কলারশিপের মতো অনেক রাষ্ট্রীয়বৃত্তি পেতে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করা যায়।

স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনা করতে আগ্রহী, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলাদেশে দিন দিন বাড়লেও, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় তা খুবই কম। এর একটি বড় কারণ হলো- আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলেই আপনি কোনো এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই নিজের চেষ্টায় একটি ভালো বৃত্তি পেতে পারেন।

বৃত্তির খোঁজ যেভাবে পাওয়া যাবে

একেক দেশের বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও আবেদনের ধরন একেক রকম। তাই প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি আবেদন করতে চান। আর আপনার একটি বড় তথ্যকেন্দ্র হলো বিভিন্ন দেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। 

যুক্তরাজ্য- https://www.gov.uk/browse/visas-immigration/student-visas

অস্ট্রেলিয়া-www.studyinaustralia.gov.au

কানাডা-https://www.cic.gc.ca/english/information/applications/student.asp

জার্মানি- https://www.daad.org.uk/en/ 

নানা দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর ওয়েবসাইটে প্রতিবছরের বৃত্তির তথ্য দেওয়া থাকে। আপনি চাইলে সরাসরি দূতাবাসগুলোতে যোগাযোগ করে বৃত্তির তথ্য জেনে নিতে পারেন। আরেকটি বড় তথ্যভাণ্ডার হলো শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট।

যেসব কাগজপত্র লাগবে

প্রত্যেক বৃত্তির জন্য আবেদন করার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। তাই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে রাখলে ওই সময়-সীমার মধ্যেই আবেদন করা সহজ হয়। অনেক দেশ মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেটের নোটারি করা কাগজপত্র চায়। আবার যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ নোটারি করার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে না।

যে বিষয়গুলো গুরুত্বপুর্ণ 

ভাষাগত দক্ষতা: যে দেশে যাবেন, সে দেশের ভাষা জানা থাকলে এটি আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আইইএলটিএস, টিওইএফএল ও পিটিইর মতো পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ-যেমন জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো দেশে সেসব দেশের ভাষা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় ভালো স্কোর পেতে হয়। 

জিপিএ: সব বিষয়ে ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সব পর্যায়ে ভালো জিপিএ থাকলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে এমন নই যে, বাইরের দেশগুলো ক্লাসের প্রথম স্থানধারীদের খোঁজে! 

প্রকাশনা ও এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস: যারা বৃত্তি পেয়েছেন, তার এই বিষয়গুলোর বেশ জোর দিচ্ছেন। ভালো কোনো জার্নালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের লেখা ছাপানো কিংবা পড়ালেখা পাশাপাশি কোনো গঠনমূলক কাজ করার অভিজ্ঞতাকে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বসহকারে অগ্রাধিকার দেয়। আপনি যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করছেন, সে বিষয় সংক্রান্ত কোনো কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা পাবলিকেশন্স আপনার বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।

স্টেটমেন্ট অব পারপাস: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি পাওয়ার জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা কেন আপনি সে বিষয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তা ব্যাখ্যা করে একটি চিঠি লিখতে হয়। এটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। যারা ইতোমধ্যে বৃত্তি পেয়েছেন, তারা এই চিঠিটি লেখার ব্যপারে যথেষ্ট সৃজনশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এই লেটার লেখার স্যাম্পল ও নির্দেশনা দেওয়া থাকে। হুবহু সেই স্যাম্পল না লিখে নিজের পড়াশোনার ইতিহাস ও কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনার স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গুছিয়ে লিখুন।

রিকমেন্ডেশন লেটার: অনেকক্ষেত্রে বিদেশে ভর্তির জন্য আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের রিকমেন্ডেশন লেটার দরকার হয়। এ লেটারটির ভাষা যদি আর দশজন আবেদনকারীর মতোই হয়, তাহলে আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। তাই আপনি যে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পড়েছেন, তাকে যথেষ্ট সময় দিয়ে একটি ভালো রিকমেন্ডেশন লেটার লিখে নিন।  

পরিকল্পনা ও গবেষণা করুন: আপনার মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী একই সঙ্গে একই বৃত্তির জন্য আবেদন করছেন। তাই আবেদনের প্রতিটি ধাপে নিজের সৃজনশীলনতাকে কাজে লাগান। আপনি যত ভালোভাবে আপনার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়, আপনার সাবজেক্ট ফান্ডিংয়ের পরিমাণ ও যারা পড়াচ্ছেন- এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন, ততই ভালোভাবে বৃত্তির আবেদন করতে পারবেন। 

তাই, ভালোভাবে সময় নিয়ে ও গুছিয়ে পরিকল্পনা করুন। আর যারা আপনার  আগে কাঙ্ক্ষিত বৃত্তির জন্য আবেদন করেছেন ও সফল হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা জেনে নিন। বৃত্তির আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি পর্যন্ত একটি বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে ধৈর্য নিয়ে ঠিক সময়ের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন করলে, আপনিও পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালেয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ।

ঢাকা/মাহি