ক্যাম্পাস

লন্ডনে আমার নামের উচ্চারণ নিয়ে… (পর্ব-৫)

লন্ডনে আসার পর থেকেই আমি আমার ডাক নামটি নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। তাদের দেশে আমাদের মতো কোনো ডাকনাম অথবা নিকনেম আলাদাভাবে না থাকার কারণে, তারা ডাক নামের ব্যাপারটি নিয়ে একদমই অবগত ছিল না। তাই আমার ডাক নাম ‘রিমন’, এটিকে তারা মনে করতো হয়তো আমাকে আদর করে ডাকা হয়। তাই কেউ রেমন, কেউবা রেইমন্ড ডাকা শুরু করলো।

ক্লাসের দ্বিতীয় দিন যাওয়ার পর, এক মেয়ে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো ‘তুমি কি নতুন, কোন দেশ থেকে এসেছো?’ আমি বললাম, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। উত্তরে মেয়েটি বললো ‘আই এম অলসো ফ্রম বেংলাদেশ’, শুনে বললাম, হোয়াট? সিরিয়াসলি! সে মুচকি হাসি দিয়ে বললো, জাস্ট কিডিং, আরো বললো, তার বাবা-মা পাকিস্তানি, তাই সে হিন্দি ও উর্দু ভাষা বোঝে ও বলতে পারে। 

আমাকে নাম জিজ্ঞেস করায় বললাম, ‘আমি রিমন’। তখন সে বললো, হোয়াট? ইজ ইট রিমন অর কুমন? ইটস ভেরি কনফিউজিং! সে তখন আমার আইডি কার্ড দেখে বললো, ‘রিয়াদ সাউন্ডস বেটার, ফ্রম নাউ ইউ উইল টেল ইট টু এভরিওয়ান’। আমি তখন মনে মনে বলতে লাগলাম ‘এই মেয়ের কথায় আমি আমার নাম পরিবর্তন করে বলতে যাবো কেনো’। সে আমাকে কত কিছু বললো রিমন-কুমন ইত্যাদি ইত্যাদি।

পরের দিন আবার ক্লাসে গিয়ে দেখতে পেলাম, মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে আছে। যখনই আমি আমার নামটি অন্য কাউকে বলতে যাচ্ছি, তখনি সে যেন কোথা থেকে উঠে এসে বলছে, ইটস রিয়াদ, নট রিমন’। পরে আমি সবাইকে আমার নাম রিয়াদ বলতে শুরু করি।

কিন্তু তার পরও আবার নতুন সমস্যার শুরু হলো। আমি যখনই কাউকে নাম বলছি রিয়াদ, সবাই এটা বুঝতে পারছিল না। তারা অনেকেই আমাকে রিয়াজ ডাকতে শুরু করে। কি যে এক সমস্যায় পড়লাম এক নাম নিয়ে, অনেককে আমি নাম বলার পর আবার বলা লাগতো ‘ইটস রিয়াদ, দ্য ক্যাপিটাল অব সৌদি আরব’।

বুঝতে পারলাম না যে, কেনো আমার নাম উচ্চারণ করতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানিরাও আমার নামটি বুঝতে পারছে না। অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তারা আমাকে ঠিকমতো নাম ধরে ডাকতে পারে।

লেখক: ব্যারিস্টার এট ল, নর্থাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, লন্ডন।