ক্যাম্পাস

শিক্ষকরা যেন অবহেলিত না হোন 

যদি প্রশ্ন করি শিক্ষা কী? তাহলে উত্তর আসবে- শিক্ষা মূলত মানুষের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যম। আর যিনি এই আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন, তিনিই শিক্ষক।

শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আর শিক্ষকের কারখানা শিক্ষাঙ্গন। পিতামাতা সন্তানকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখান ঠিকই কিন্তু সন্তানকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন শিক্ষক।

শিক্ষকতা মহান পেশা। সেই মহান পেশায় আত্মত্যাগের মহান প্রত্যয় নিয়েই শিক্ষকরা নিজেকে শিক্ষার্থীদের কাছে অকাতরে বিলিয়ে দেন। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েও চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের শিখা জ্বালাতে। একজন শিক্ষক ছাত্রদের কাছে আদর্শ স্বরূপ। তাই শিক্ষকরা যা করেন, শিক্ষার্থীরা সেটা অনুকরণ করে।

শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের প্রদীপ ও আশার আলো ছড়িয়ে তাদের সুপ্ত প্রতীভাকে বিকশিত করে মনোজগতকে পূর্ণ করেন। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে জগ ও মগের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এখানে শিক্ষককে জগ ও শিক্ষার্থীকে মগ বলা যেতে পারে। জগ ভর্তি পানি থেকে যেভাবে ধীরে ধীরে মগে পানি ঢেলে আমরা পান করতে পারি, ঠিক তেমনি শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের দ্বারা আমরা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হই। তারা তাদের শিক্ষাদানের পরিধি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবিক চিন্তা চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করেন। তাদের উপদেশ ও কাজ আমাদের চলার পথের পাথেয় হিসেবে কথায় ও কাজে বাস্তবমুখী হতে সাহায্য করে।

যেহেতু শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত, সেহেতু শিক্ষকই জাতি গঠনের নির্মাতা। কুমোর যেমন মাটিকে বিভিন্ন আকৃতিতে প্রলেপ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করেন, ঠিক তেমনি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাদের একেকটা বিষয়ে পারদর্শী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এতে আমাদের ভালো ক্যারিয়ার গঠন যেমন সহজ হয়, তেমনি জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে কীভাবে সাহস ও আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে সব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে, সেটাই শিক্ষা দেন।

আজ যে আমরা এই জায়গা পর্যন্ত আসতে পেরেছি, সেটাও আমাদের অনেক শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফল। একটি শিক্ষিত ও রুচিশীল জাতি গঠনে শিক্ষকরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই মহান পেশায় যারা জড়িত, তাদের সম্মানী ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য পেশার চেয়ে কম, যা আমাদের জন্য চরম হতাশাজনক ব্যাপার। 

একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢোকে, ভালোবাসা বা আন্তরিকতা জানালা দিয়ে পালায়’। সুতরাং শিক্ষকরা যাতে জীবীকার তাড়নায় কর্মক্ষেত্রে সামান্যতম অবহেলা করতে না পারেন, সেজন্য সরকারের উচিত তাদের বেতন, ভাতা ও অন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া। এতে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু জীবিকার দিকে না ঝুঁকে বরং দেশের আগামী দিনের কান্ডারী শিশুদের ঘিরে আবর্তিত হবে।

আজ ১৯ জানুয়ারি, জাতীয় শিক্ষক দিবস। ২০০৩ সালের এই দিনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার এই দিবসটি চালু করে।

জাতীয় শিক্ষক দিবস। আজকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই শিক্ষদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা প্রত্যেকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে পেরেছি এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করে অনেকটা পথ এখনো যাওয়া বাকি।

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড - ১৯) কারণে আমরা সবাই যার যার বাসায় আছি। জাতীর এই ক্রান্তিলগ্নেও অত্যন্ত কষ্ট করে শিক্ষকরা সাহসী যোদ্ধার মতো আমাদের পাশে আছেন, অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন, যাতে আমরা সেশনজটে না পড়ি। তাদের জন্য দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।