ক্যাম্পাস

আবারো জমবে আড্ডা প্যারিস রোডে

করোনা মহামারিতে প্রায় ১১ মাস ধরে ঘরবন্দী জীবনযাপন করে সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। সবাই অপেক্ষার অবসানের প্রহর গুণছে। সময় অতিক্রম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার জীবনের রঙ্গিন স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু ঘটছে। সবার চোখে-মুখে একটি বছর হারিয়ে যাওয়ার আর্তনাদের চাপ লেগে আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্যারিস রোডে কাটানোর স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন মো. মনির হোসেন।

মারিয়া ছামির মিতা

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল প্রতিটি দিন যেন হাসিমুখে কাটাতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বান্ধবীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় পার করেছি চারদিকে সবুজে ঘেরা, পাখির কলকাকলিতে ভরপুর, দুধারে সুউচ্চ গগনশিরিষ গাছ, মাঝখানে পিচঢালা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড।

ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম যে-দিকে তাকিয়ে প্রাণ জুরিয়ে ছিল, তা হলো স্বপ্নের প্যারিস রোড। গত এক বছর ধরে গ্রামের বাড়িতে সময় কাটছে কিন্তু মন পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়রে আঙ্গিনায়। প্রহর গুণছি অপেক্ষার অবসানের।

মাইশা রহমান

শীতের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা। প্রথম দিন থেকে সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারপাশের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। গত ফাল্গুনে কত হৈচৈ করে, আনন্দের সঙ্গে ঘুরেফিরে দিনটি পার হয়েছিল। আজ তা স্মৃতির এলবামে জমা পরে আছে। আজ চারদিকে নিঃস্তব্ধতার সুর। হঠাৎ করে জীবনে এমন একটি সময় পার করতে হবে, তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি।

বাড়িতে আসার পর সবচেয়ে বেশি মিস করছি চিরচেনা সজীব সতেজে ভরপুর প্যারিস রোডের প্রতি মুহূর্তে দৃশ্যাবলি। স্মৃতির পাতা থেকে নেওয়া নির্মল বাতাসে দখিনা হাওয়ায় বৃষ্টির মতো গগনশিরিষ গাছের ছোট ছোট চেরা পাতাগুলো যখন ঝড়ে পড়তো, নিজের আনমনে হারিয়ে যেতাম এক অন্য নতুন ভুবনে।

ইকরা মোরশেদ তন্বী, সুরাইয়া সুলতানা ফারহানা, তামান্না ইসলাম শান্তা তাদের ইচ্ছে মহামারি শেষ হলেই আবার জমবে আড্ডা প্যারিস রোডে। তাদের স্মৃতি চারণে উঠে আসে দ্বিতীয় বর্ষে ভাইভা পরীক্ষা শেষ করে প্রথম যেখানে ছুটে এসে ছিল গাছের পর গাছ, পাতার পর পাতা, গাছের পাতার মেলা-বন্ধনে একাকার অপরূপ সোন্দর্যে পরিপূর্ণ প্যারিস রোডের আঙ্গিনায়।

তারা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের ক্লান্ত মনকে সজীব-সতেজ করতে চলে যেতেন প্যারিস রোডের পাশে সবুজ ঘাসে মোড়ানো আঙ্গিনায়, যেখানে অপূর্ব সৌন্দর্যে বিমহিত হতো তাদের মন। সবার ইচ্ছে আবার যেন অতীতের দিনগুলো নতুন করে ফিরে আসে, ভালোবাসার এক নতুন বন্ধনে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।