ক্যাম্পাস

১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘ছাত্র-শিক্ষক’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক ও দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহার স্মরণে ‘ড. জোহা. ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এসময় আলোচকরা ১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘ছাত্র-শিক্ষক’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের লেকচার থিয়েটারে এ সভার আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস)।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারিকে শিক্ষকেরা বলেন ‘শিক্ষক দিবস’। আমরা কিন্তু এটাকে ‘ছাত্র-শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই জানি। কারণ রক্ত জানে রক্তের আহ্বান। ড. জোহা গুলিতে আহত হয়েছেন শুনে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম নগরের সোনাদীঘির কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তার ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়েছিলেন। সেসময় পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী তার মাথায় গুলি করলে তিনি ড. শামসুজ্জোহার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।

শহীদ শামসুজ্জোহা দিবসকে পৃথিবীব্যাপী ‘ছাত্র-শিক্ষক’ দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ড. জোহাকে সবাই চিনতেন, তিনি জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বোচ্চ মানবিক আচার-আচরণ দিয়ে ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর ছাত্র-শিক্ষক দিবস করতে হবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় দাবি জানিয়েছি, এটা ছাত্র-শিক্ষক বা ছাত্র-শিক্ষক দিবস করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহমদ সফিউদ্দীন বলেন, সেদিন ড. জোহা শহীদ না হলে, সারাদেশে গণঅভ্যুত্থান না হলে, পাকিস্তানিরা হয়তো বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করতো। তাহলে আর আজকের বাংলাদেশ হতো না। ড. জোহা শহীদ হয়েছিলেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্র নূরুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হয়েছিলেন। আজ আমরা তাদের অনেককেই ভুলে গিয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে আমরা কিন্তু কেবল শিক্ষক দিবস নয়, ছাত্র-শিক্ষক দিবস হিসেবে দাবি করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছি। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, সেদিন ড. জোহার সঙ্গে সঙ্গে একজন ছাত্রও প্রাণ দিয়েছিলেন। ছাত্র-শিক্ষকের সম্প্রীতির এই বিষয়গুলো বর্তমানে কেউ জানার চেষ্টা করি না। ড. জোহার শহীদ হওয়ার অর্ধশতাব্দী পরেও কেন আমাদের দাবি পূরণ হয়নি, এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে এটি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রজন্ম বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনা নয়। এটি সারা দেশের ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতির একটি নিদর্শন।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন আব্দুল কাইয়ুম, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজ রনি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান এবং হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল অন্তিকাম বন্ধন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান ও সদস্য রাজিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি শাহীন আলম সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভার আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ‘হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগো’।