ক্যাম্পাস

জাপানে পড়তে চাইলে যা জেনে রাখা প্রয়োজন 

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত। বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৯.৫ শতাংশই রয়েছে জাপানে অধ্যয়নরত। এদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যাপক চাহিদার কারণ হচ্ছে, জাপানে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তি সহকারে বিস্তৃত জ্ঞানদান প্রক্রিয়া রয়েছে। 

ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে মেডিসিন, সাহিত্য থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রশাসন যে কোনো বিষয়েই জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে জ্ঞান অর্জনের বিস্তৃত সুযোগ। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জনে জাপানে পাড়ি জমায়। 

বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে সে দেশের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত জেনে রাখা প্রয়োজন। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য রয়েছে জাপানে উচ্চশিক্ষার আদ্যপান্ত। সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।  

জাপানে শিক্ষাব্যবস্থা 

জাপানে ৫ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়, আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ অব টেকনোলজি, জাপানিজ স্টাডিজ, প্রফেশনাল ট্রেইনিং স্কুল। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা অনুসারে ভর্তির সুযোগ পান। 

কোর্সের মেয়াদ

জাপানে স্নাতক পর্যায়ে বেশিরভাগ কোর্সের মেয়াদ চার বৎসর। তবে মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ভেটেরেনারি সায়েন্সের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৬ বৎসর। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কোর্সের মেয়াদ ২ বৎসর হয়ে থাকে।

ডক্টরেট ডিগ্রির ক্ষেত্রে কোর্সের মেয়াদ ৩ বৎসর, তবে মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ভেটেরেনারি সায়েন্সের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৪ বৎসর।

শিক্ষাবর্ষ 

জাপানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে, যা পরবর্তী বছরের মার্চে শেষ হয়। সাধারণত ১টি শিক্ষাবর্ষ ২টি সেমিস্টারে বিভক্ত থাকে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর থেকে মার্চ।

আবেদন প্রক্রিয়া

প্রথমত, আগ্রহী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হয় এজন্য তাকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বেঁছে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন প্রক্রিয়া ও ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্যগুলো পাওয়া যাবে। যেহেতু আবেদন প্রক্রিয়া বেশ সময় সাপেক্ষ, তাই সময়মতো ক্লাস শুরু করতে হলে কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত ২/৩ মাস পূর্বে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাস সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করবেন।

শিক্ষাগত ন্যূনতম যোগ্যতা

স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ১২ বৎসর স্কুলিং অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট থাকতে হবে। মাস্টার্সে ভর্তির জন্য অন্তত ১৬ বছরের স্কুলিং থাকতে হবে।

বেশিরভাগ জাপানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাপানি ভাষায় পাঠদান করা হয়। কাজেই জাপানে যেতে চাইলে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে ওই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ওই ভাষা শেখার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন মেয়াদের জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স রয়েছে।

জাপানে যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়

জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-

মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি, ভেটেরেনারি সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স, বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, ম্যাথমেটিক্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, মলিকিউলার সায়েন্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মার্কেটিং, ইকোনমিক্স, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, ল’ ম্যানেজমেন্ট ও ফিন্যান্স।  

জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

জাপান বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর একটি। দেশজুড়ে জাপানিরা অসংখ্য প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এখানে জাপানের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দেয়া হলো-

ইউনিভার্সিটি অব টোকিও,  কিয়োটো ইউনিভার্সিটি, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, তোহুকু ইউনিভার্সিটি, কেইও ইউনিভার্সিটি, কিয়ুশু ইউনিভার্সিটি, নাগোয়া ইউনিভার্সিটি, হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি, সুকুবা ইউনিভার্সিটি, কোবে ইউনিভার্সিটি, চিবা ইউনিভার্সিটি, ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি, হিরোশিমা ইউনিভার্সিটি, কানাজাওয়া ইউনিভার্সিটি, কায়ামা ইউনিভার্সিটি, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স, টোকিও মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি, টোকিও মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি, ওসাকা সিটি ইউনিভার্সিটি, নিগাতা ইউনিভার্সিটি, কুমামোতো ইউনিভার্সিটি, তোকুশিমা ইউনিভার্সিটি, ওসাকা প্রিফেকচুয়াল ইউনিভার্সিটি, গিফু ইউনিভার্সিটি, টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, ইয়োকো হামা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নাগোয়া সিটি ইউনিভার্সিটি, কাগোশিমা ইউনিভার্সিটি।

ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জাপান দূতাবাস থেকে ভিসা ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা ফরম সংগ্রহের সময় অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে থাকতে হবে। একটি পাসপোর্টের বিপরীতে কেবল একটি ফরমই প্রদান করা হয়। ছুটির দিন ব্যতীত দূতাবাসে রবিবার, সোমবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়।

আবেদনের সঙ্গে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট অবশ্যই সংযুক্ত করতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীকে একটি রশিদ দেওয়া হয়, যেখানে সাক্ষাৎকারের সময় উল্লেখ থাকে।

আবেদনের জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন

১. পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬ মাস মেয়াদ আছে এমন)

২. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (বিগত ৬ মাসের ভেতর তোলা এমন হতে হবে)

৩. যথাযথভাবে পূরণকৃত ভিসার আবেদনপত্র

৪. শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ (এসএসসি থেকে সর্বশেষ ডিগ্রি পর্যন্ত; সব পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও প্রশংসা পত্র, বাংলা অথবা ইংরেজি)

৫. জাপানের যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে যাবেন, তার লেটার ইব এক্সেপ্টেন্স 

৬. জাপান থেকে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব এলিজিভিটি

৭. জাপানে পড়তে যাওয়ার কারণসমূহ বর্ণনা করে একটি কভার লেটার

আপনাকে অবশ্যই দূতাবাসে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে আরো কোনো কাগজপত্র লাগবে কিনা। এই কাজটি অবশ্যই যেদিন ডকুমেন্টগুলো জমা দেবেন, সেদিনই দুপুর ৩টা থেকে পৌঁনে ৫টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

সাক্ষাৎকার পর্ব

দূতাবাস থেকে দেওয়া রশিদে যে তারিখ উল্লেখ থাকবে, সেদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে আপনার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। যদি নির্দিষ্ট দিনে কেউ কোনো কারণে দূতাবাসে পৌঁছাতে অসমর্থ হয়, তাহলে পরবর্তী যে কোনো কর্মদিবসে আপনি যেতে পারেন। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সাক্ষাৎকারের সময় জমা দিতে হবে, অন্যথায় সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় না।

ভিসা প্রদান

সাধারণত পরবর্তী কর্মদিবসেই ভিসা দেওয়া হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে আরো কিছু কাগজপত্রসহ পুনরায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। দূতাবাস বরাবর প্রদানকৃত ডকুমেন্ট ছাড়া অন্য সব ডকুমেন্ট পাসপোর্টের সঙ্গেই ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।

টিউশন ফি (বাৎসরিক)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব বিভাগের জন্য টিউশন ফি ৭,১৩,৮০০ ইয়েন।  স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের জন্য প্রায় ৮,৩৩,১৩৩ থেকে ৯,৯৫,৪৬৫ ইয়েন। গ্র্যাজুয়েট স্কুলগুলোতে এই ফি ৮,৯১,৪৬৯ থেকে ১১,৩৬,৪৯২ ইয়েন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাসস্থান সুবিধা ও খরচ

জাপানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ৪ ধরনের বাসস্থানে থাকতে পারে। এগুলো হচ্ছে

১. স্টুডেন্ট ডর্মেটরি

২. স্থানীয় সরকারি সংস্থা কর্তৃক বরাদ্দকৃত পাবলিক হাউজিং

৩. জাপানিজ বিভিন্ন সংস্থার স্টাফ ডর্মেটরি

৪. ব্যক্তিগত ভাড়া বাসা

এলাকাভেদে বাসস্থানের খরচে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন- টোকিওতে একজন ছাত্রের বাসস্থান খরচ মাসিক প্রায় ১,৫৮,০০০ ইয়েন আর শিকাগোতে এটা প্রায় ১,১৭,০০০ ইয়েন।

উল্লিখিত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানা থাকলে একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী সহজেই উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান যাত্রায় সফল হতে পারেন।