ক্যাম্পাস

হাতহীন সঞ্জুর চাওয়া শুধু একটাই…

হালকা বাতাস, চার দিকে নিস্তব্দ। ঘরের দোয়ারে বসে আছে সতেরো বছরের একজন কিশোর। আশেপাশে কেউ নেই। বন্ধুরা মাঠে খেলছে, আর সে বসে সাদা খাতায় জীবন যুদ্ধের এক বাস্তব রচনা তৈরি করছে। দুই হাত নেই, তাই পা দিয়েই লেখছে সে। বলছি সঞ্জু দাসের কথা।     

নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাইল হিন্দুপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সঞ্জুর পিতা চিত্র রঞ্জন দাস একজন মাছ বিক্রেতা। তার সামান্য আয়ে স্ত্রীসহ তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে চলে সংসার। 

জন্মগতভাবেই সঞ্জুর দুটি হাত নেই। তবু সে পরিবারের বোঝা না হয়ে কোনো একটা করে পিতা-মাতাকে সহযোগিতা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে সে আমদিয়া ইউনিয়নের বনাইদ বাবু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা পড়ালেখার পাশাপাশি কম্পিউটার শিখে সে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অংশ নেবে। কিন্তু অসচ্ছল পরিবারের সন্তান সঞ্জু দাসের এই ইচ্ছা যেন শুধুই স্বপ্ন!মাছ বিক্রেতা বাবা ছেলের কম্পিউটার কিনে দিতে অপারগ। 

এই অবস্থায় হঠাৎ করেই স্বপ্ন যেন নিজে এসে ধরা দেয় তার কাছে। সম্প্রতি আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাইলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে দুই হাতবিহীন সঞ্জুকে মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখে এগিয়ে যান মাধবদীর শাহিন আইটি সেন্টারের মালিক খন্দকার শাহিন। এ সময় কথা প্রসঙ্গে সঞ্জু তার ইচ্ছার কথা জানায় শাহিনের কাছে।

সঞ্জুর বন্ধু আকাশ জানায়, ছোটবেলা থেকেই তারা একসঙ্গে লেখাপড়া করে আসছেন। সঞ্জুর দুই হাত নেই বলে স্কুলে টিফিনের সময় কোনো কিছু খেতে চাইলে বন্ধুরা মুখে তুলে খাইয়ে দিতো, কিন্তু সঞ্জু ভালো পড়ালেখার পাশাপাশি দুই পায়ে স্মার্ট ফোনে ভালো টাইপিং করতে পারে। তার একটি কম্পিউটার থাকলে সে নিজে নিজেই কম্পিউটার শিখে ঘরে বসে টাকা আয়ের একটা ব্যবস্থা করতে পারতো বলেও সে জানায়। সব শুনে শাহিন তাকে কম্পিউটার শেখানোর সব দায়িত্ব নেন ও তাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে চলে আসেন।

সেই থেকে সঞ্জু মাধবদী এসে কম্পিউটার চালানো শিখছে। এতে সঞ্জুর পরিবার ও বন্ধুরা খুশি। সঞ্জু বলে, ‘আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে, তবে আমার একটা কম্পিউটার থাকলে ভালো হতো। তাহলে, বাড়িতে বসে বসেও অনুশীলন করা যেত।’

সঞ্জুর প্রশিক্ষক খন্দকার শাহিন জানান, সঞ্জু লেখাপড়ার পাশাপাশি তার মাধবদীর রাইন ওকে মার্কেটস্থ শাহিন আইটি অ্যান্ড কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে এসে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পা দিয়েই সে এমএস ওয়ার্ডে লেখালেখিসহ বেশকিছু কাজ করতে পারে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই উদ্যোক্তা হিসেবে সঞ্জুকে তৈরি করা যাবে বলেও তিনি আশা করছেন।

নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রতিবন্দীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে মানবসম্পদে পরিণত হতে পারবে। এতে সামাজেও তাদের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে।’