ক্যাম্পাস

গবেষণা বাজেট বাড়লেও অসন্তোষ গবেষকদের 

প্রতি অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বার্ষিক বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে গবেষণা খাতেও বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গত চার বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ হারে রাবির গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই বাজেট গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য ও অন্যান্য গবেষণাসামগ্রী সংগ্রহ করতে ‘পর্যাপ্ত নয়’ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গবেষকরা বলছেন, পাশ্ববর্তী দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বাজেটের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট খুব নগণ্য। ফলে গবেষণা করতে আর্থিক সংকটে পড়তে হয় শিক্ষকদের। অর্থের অভাবে কেনা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় গবেষণাসামগ্রী। বিদেশ থেকে অনুদান নিয়ে গবেষণা কাজ চালাতে হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে গবেষকদের।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্বল্পতার কারণে এবং পুরনো যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে অনেক সময় গবেষণার মান সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। এছাড়া গবেষণার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার ও উন্নতমানের ল্যাব না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাবির বাজেট ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। গবেষণায় বাজেট ছিল ৫ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ১০ শতাংশ। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গবেষণায় বাজেট ছিল ৭৫ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বাজেট ৩৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গবেষণায় বাজেট ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়া দেখা যায়, গত চার বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বাজেট শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গবেষণায় বাজেট ‘পর্যাপ্ত নয়’ উল্লেখ করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা না করে যদি ভারত, পাকিস্তানসহ পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করি। তাহলে দেখা যাবে, আমাদের তুলনায় তাদের বাজেট অনেক বেশি। সম্প্রতি ভারত সরকার ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের গবেষণা কাজে এই বরাদ্দ ব্যয় করবে।’

গবেষণা কাজে কোনো ধরনের অর্থ সংকটে পড়তে হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমাদের শক্তিশালী কম্পিউটার দরকার। কারণ, আমরা যে সমস্ত ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন বা হিসাবের কাজগুলো করি সেগুলো সাধারণ কম্পিউটারে করাটা খুব কঠিন। আমার ল্যাবে ওই ধরনের কোনো কম্পিউটারই নেই। মাঝারি মানের দুটো কম্পিউটারে কাজ করতে হচ্ছে। পিএইচডি, এমফিলের অনেক ছাত্র আছে। কিন্তু তাদের তো দুটো কম্পিউটারে সমন্বয় করা বেশ কঠিন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘গবেষণা বাজেটে যে বরাদ্দ হয় সেটা মোটেও পর্যাপ্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের কত শতাংশ গবেষণায় বরাদ্দ হয়, সেটা বিশ্বব্যাপী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে নির্দেশ করে। গবেষণা বাজেট যখন মোট বাজেটের এক শতাংশ বা তার কম হয়, তখন এই বাজেট ‘যথেষ্ট’ বলার কোনো উপায় নেই।’

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞানের অধ্যাপক খালেদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে না’ বলে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলি। কিন্তু যারা গবেষণা করছেন তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি-না? বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক গবেষণাই হয়। তবে গবেষণা কাজটি কিভাবে সম্পন্ন হলো, তারা কোথা থেকে টাকা পেল, কী পরিস্থিতিতে গবেষণাটি করেছে এইসব বিষয় কেউ কোনো দিন দেখে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষক আরও বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে তো বাজেট বাড়ছেই। কিন্তু গবেষণার মান কতটা বাড়ছে? শিক্ষায় গুণগতমান বাড়ছে না কেন? দেখা গেছে, গবেষণা করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন সেটা সবাই পাচ্ছে না। যার যেমন প্রয়োজন সে তেমন বাজেট ঠিকমতো না পেলে গবেষণা করবে কিভাবে? করোনাকালে কেমিক্যালের জন্য টাকা ছিল না। তখন বিদেশ থেকে চেয়ে চেয়ে কেমিক্যাল আনতে হয়েছে। এভাবে তো আর গবেষণা কাজ এগিয়ে নেওয়া যায় না। তাই গবেষণার জন্য যে বাজেট, সেটা অবশ্যই বাড়ানো প্রয়োজন।’