ক্যাম্পাস

বইমেলায় ‘আদমজীয়ান’ তিন শিক্ষার্থীর পাঁচ বই

সাহিত্যের প্রতি মানুষের নিয়মিত আবেদনকে আরও সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণতা দানে অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় লেখক-সাহিত্যিকদের অবদানের পাশাপাশি নতুন লেখকদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তাই নিয়মিত আত্মপ্রকাশ ঘটছে লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের। 

তবে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশে বইমেলায় তাদের সমাগমটা সর্বদাই বেশি হয়। এই বছরের বইমেলাতেও তেমনি অনেক তরুণ ও নতুন লেখকদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তেমনি তিনজন উদীয়মান লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হবো আজ। তারা বর্তমানে বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করছেন। 

ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলে মো. জাহিদুল ইসলাম অংকন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা শেষ করেছেন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছেন। তার লেখালেখির শুরুটা খুব ছোটবেলাতে না হলেও দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন আরম্ভ করেন। 

২০২০ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম বই ‘শূন্য ঠিকানা’। সাহিত্যমনা এই তরুণ লেখক পরবর্তী বছরেই দ্বিতীয় বই প্রকাশ করেন। তার লেখা দ্বিতীয় বই ‘খোঁপার বাঁধন’ প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি। মূলত তার দুইটিই উপন্যাস। বই দুইটি এবছর বইমেলায় ঘাসফুল প্রকাশনীর ২২৯ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। 

লেখালেখিতে কাকে অনুসরণ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাদের কলমের আঁচড়ে যুদ্ধ থেমে যেত, তারাই অনুপ্রেরণা।’

পরিবারের সহযোগিতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘বাঁধা ছাড়া তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি। মা শুধু বলেছেন, ‘আমি জানি তুই যা করবি বুঝেই করবি।’ তাই বিশেষ কাউকে ধন্যবাদ দিতে হলে মাকেই দেব।’

লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বই প্রকাশের অনুভূতি সম্পর্কে জাহিদুল ইসলাম অংকন বলেন, ‘এক জীবন লিখে যেতে চাই। একজন লেখকের জন্য তার নিজের বই হলো সন্তানের মতো। বই প্রিন্ট হয়ে বের হলে তার গন্ধে মাতোয়ারা হওয়ার অনুভূতি শব্দে প্রকাশ করা খুব কঠিন আমার জন্য।’

রাফিউল ইসলাম সাজিদ, মাধ্যমিক পার করেছেন ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাহেরচরে তার গ্রামের বাড়ি। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছেন। ছোটো থেকেই অল্প অল্প ছন্দ সাজানোর প্রবণতা ছিল তার। তবে লেখালেখি শুরু করেছেন প্রায় তিন বছর আগে।  ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতে তৈমুর সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। তারপর শুরু সে বিষয়ে নিয়ে পড়াশোনা আর গবেষণা। পরবর্তী সময়ে দু’বছরের পরিশ্রমে লিখে ফেলেন ঐতিহাসিক গল্প ‘তৈমুর লং মহামতি নাকি দুর্গতি’। এটাই তার লেখা প্রথম বই। এবারের বইমেলায় ‘বাবুই প্রকাশ’ নামক প্রকাশনীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা বইটি। স্টল নং ৬০১-৬০২ এ পাওয়া যাচ্ছে বইটি। লেখালেখিতে তিনি অনুসরণ করেন হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারের মতো সাহিত্যিকদের।

তার লেখালেখি জগতে পরিবারের সবাই প্রায় সহযোগিতা করেছেন। যদিও প্রথমে রাজি হননি কেউ। তবে এক সময় রাজি করিয়েছেন।

বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার মা-বাবাকে। পরিবারের বাইরেও অনেকেই সহযোগিতা করেছেন তাকে। তিনি বলেন, ‘আমার খুব কাছের বড় ভাই ইব্রাহীম রাসেল ভাই, বন্ধুদের মধ্যে তারেক, নিলয়, চমক, নিশা ওদের সহযোগিতা পাই। আমার সব ধরনের সমস্যাতেই তাদের পাশে পাওয়া যায়।’

তিনি বর্তমানে কয়েকটি সংগঠনে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছেন। লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বই প্রকাশের অনুভূতি সম্পর্কে রাফিউল ইসলাম সাজিদ বলেন, ‘লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলতে গেলে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখে যেতে চাই। আমার বই কত কপি বিক্রি হয় তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। আমার কাছে কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পাঠকদের উদ্দেশ্য বলতে চাই-বইটি পড়ার অনুরোধ থাকলো। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নাই। সর্বশেষ পৃথিবী বইয়ের হোক।’

সিহাদুল ইসলাম প্রান্ত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষ করেছেন রাজধানী ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে। বরিশালের ঝালকাঠিতে তার পৈতৃক নিবাস। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছেন।

লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল নিতান্তই ভালো লাগা থেকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে একটা প্রবন্ধ আর সপ্তম শ্রেণিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন নিতান্তই শখের বশে। এরপরেই নিয়মিত লেখালেখির শুরু হয়।  

এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছে তার দুটি যৌথ বই। প্রথমটি হলো ‘নির্বাচিত গল্প’, যা গল্পগ্রন্থ। এ বইয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নতুন অনেক লেখকের লেখা স্থান পেয়েছে। নব সাহিত্য প্রকাশনীর স্টল নম্বর ৩১৫ তে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশনায়-ঐকতান প্রকাশনী। 

দ্বিতীয় বই ‘অনন্ত বিষাদগাঁথা’, এটিও যৌথভাবে সম্পাদিত একটি গল্পগ্রন্থ। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ALATE’ এর মেম্বারদের লেখা রয়েছে এ বইয়ে। এটি পাওয়া যাচ্ছে-পান্ডুলিপি প্রকাশনীর ৫৫৬ নম্বর স্টলে।  প্রকাশনায়-বিসর্গ প্রকাশনী।

তিনি জানান, লেখালেখির ক্ষেত্রে তেমনভাবে সরাসরি কাউকে অনুসরণ করা না হলেও তার কাছে হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হকের লেখা ভালো লাগে। পরিবারের সহযেগিতাও ছিল তার লেখালেখির ক্ষেত্রে। তার মা তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। 

তিনি বলেন, ‘মা আমার প্রতিটি লেখা মন দিয়ে পড়েন আর ভুলগুলো শুধরে দেন। তাই বিশেষ ধন্যবাদটা আমি তাকেই দিতে চাই। পরিবারের বাইরেও স্যার-ম্যাম, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র মোটামুটি সবাই কম-বেশি সহযোগিতা করেন। পরিবারের বাইরে বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই আমার বন্ধু মুনওয়ারকে।’