ক্যাম্পাস

অগ্রযাত্রার ৯ম বর্ষে থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় 

সাহিত্যের অন্যতম জায়গাজুড়ে রয়েছে নাটক। কোনো একটি বিষয়কে অভিনয়ের মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তোলাই নাটকের কাজ। যা সমাজ, পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে। নাটক প্রতিটি সমাজের অবিচার, অসঙ্গতি, নির্মমতা যেমন তুলে ধরে, তেমনি তুলে ধরে সমাজের ঐতিহ্য, সংগ্রাম। 

বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে নাটকের সম্পর্ক বহু পুরনো। বলতে গেলে সাহিত্যের পরিপূর্ণতায় নাটকের ভূমিকা রয়েছে। তবে মঞ্চনাটকের ধারা কিছুটা ভিন্ন। যেখানে মানুষ বাস্তবতা দেখতে পায় খুব সহজে। তেমনি মানুষের কথা বলতে, সমাজের কথা বলতে কিছু তরুণের হাত ধরে লাল মাটির ছোট ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে ‘থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের একটি নাট্য সংগঠন। বলা হয়ে থাকে ধর্মীয় উদ্যোগে পৃথিবীর প্রথম নাট্য চর্চার সূচনা হয়। তবে আধুনিক যুগের নাট্যকলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে এই নাটক।

‘স্বদেশী স্পন্দনে, তারুণ্যের জয়গানে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হওয়া থিয়েটার কুবি আজ এক দশকের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন আয়োজন ছোট্ট এই ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে রেখেছে তারা। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসাবে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি ইতোমধ্যে ৯টি সফল মঞ্চনাটকসহ অসংখ্য নাটিকা ও পথনাটক উপহার দিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো বউ, দালাল, কবর, স্ট্যাচু অব ডেমোক্রেসি, চৌরাস্তা, বেহুলা ভাসান, ইনডেমনিটি ও ১৯৭১। যা প্রতিবারই দর্শকপ্রিয় হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে থিয়েটারের নাট্যকর্মীরা। সম্প্রতি বিটিভির নৃত্যশিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন থিয়েটার কর্মী অদিতি রায় চৌধুরী। ২০১৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া ১২তম সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ইউথ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন থিয়েটারের বর্তমান সভাপতি অর্ক গোস্বামী। এছাড়াও নাট্য পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন অনেকে।

কুবি থিয়েটার আজ নবম বর্ষে। শৈশব থেকে কৈশোরে পা দেওয়া এই সংগঠনের পথচলা মসৃণ ছিল না। ছোট ক্যাম্পাস, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেই কাজ করতে হয়েছে থিয়েটার সদস্যদের। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী ও আইনুল হকের হাত ধরে পথচলা শুরু করে থিয়েটার। হাতেগোনা কয়েক সংস্কৃতিমনা ব্যক্তির হাতে শুরু করা সংগঠনটি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

কথা হয় থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘থিয়েটার হলো এমন একটি সংগঠন; যেখানে নাট্যচর্চার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করাও হয়। এখানে তুলে ধরা হয় সমাজের নানা অসঙ্গতি ও রঙিন সব বাস্তবতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের স্কিল ডেভেলপ্ট করার অন্যতম প্লাটফর্ম হলো থিয়েটার। যা শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ করে এবং মুক্তচর্চার প্রেরণা যোগায়’। নাট্যচর্চার বাইরেও সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড সংগঠনটি সচেতন মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি।

তবে প্রতিবারের মতো কুবি থিয়েটারের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে থাকছে না তেমন জমকালো আয়োজন। এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি অর্ক গোস্বামী বলেন, ‘বর্ষবরণ ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল, তারমধ্যে অন্যতম হলো, ক্যাম্পাসের প্রসিদ্ধ স্থানগুলোতে আল্পনা অঙ্কন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোতে অংশগ্রহণ ও রাতে একটি মঞ্চনাটক পরিবেশনা করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো ভার্চ্যুয়ালি একটি শ্রুতিনাট্যের আয়োজন করার।’

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।