ক্যাম্পাস

ভিসা সাক্ষাৎকারে সফল হওয়ার কিছু উপায়

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে ভিসার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভিসা হচ্ছে বিদেশে থাকার জন্য বৈষয়িক অনুমতিপত্র। সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে একজন ভিসা অফিসার আবেদনকারীর ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করেন। 

অনেকেই মনে করেন, অফিসাররা হয়তো শুধু কাগজপত্র দেখেই ভিসা কনফার্ম করে থাকেন, তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সফল সাক্ষাৎকার ৮০ শতাংশ সহায়তা করে এবং বাকি ২০ শতাংশ নির্ভর করে প্রার্থীর কাগজপত্র, যেমন- একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ব্যাংক স্টেটমেন্টের ওপর। সুতরাং একটি সফল সাক্ষাৎকারের জন্য ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। 

কীভাবে আপনার সাক্ষাৎকারকে সফল করবেন, তা নিয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

শুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণ 

সাক্ষাৎকারের সময়ে অফিসাররা ইংরেজিতে প্রশ্ন করে থাকেন। সুতরাং আপনাকে যখন কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে, তখন ব্রিটিশ কিংবা আমেরিকান ইংরেজির শুদ্ধ উচ্চারণভঙ্গি ব্যবহার করুন, বাংলা বলা কিংবা ইংরেজির চিরাচরিত উচ্চারণভঙ্গির ব্যবহার পরিহার করুন।

ইউনিক কিছু বলুন

ভিসা অফিসার যদি কোনো প্রশ্ন করে থাকেন, যার উত্তর একাধিক, তখন ইউনিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- ভিসা অফিসার প্রশ্ন করলেন, আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।

এই উত্তরে অধিকাংশ প্রার্থী নিজ নাম, জন্ম তারিখ, বাসস্থানের ঠিকানা বলেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে, এসব তথ্য আপনার ডকুমেন্টেই আছে, যা অফিসার আগে থেকেই জানেন। কোনো প্রার্থী যখন এমন ধরনের উত্তর দেবেন, তখন অফিসাররা বিরক্তবোধ করবেন। সুতরাং আপনার নিজের সম্পর্ক ইউনিক কিছু বলুন। যেমন, আপনার আইডল কে? আপনি কী কাজ করতে ভালোবাসেন? আপনার প্রিয় লেখক কে? আপনার কী হওয়ার ইচ্ছা ইত্যাদি।

নিজের ডকুমেন্ট স্টাডি করুন 

সাক্ষাৎকারে ভিসা অফিসার আপনার ডকুমেন্ট সম্পর্কেও প্রশ্ন করবেন। সুতরাং আপনি যেসব ডকুমেন্ট জমা দেবেন, সেগুলোতে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন। যেমন- জন্ম তারিখ, সিজিপিএ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট সম্পর্কে, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি ইত্যাদি। তাছাড়া ফরম ঠিকমতো পূরণ করা হয়েছে কিনা এবং ডকুমেন্টস ঠিকঠাক আছে কিনা, ভালো করে দেখে নিন। 

চুপ থাকবেন না 

সাক্ষাৎকারের সময় অফিসার যখন প্রশ্ন করবেন, তখন যদি কোনো প্রশ্নের উওর আপনার না জানা থাকে দ্বিধাহীন বলে দেবেন যে, উত্তরটি আপনার জানা নেই। পাশাপাশি, কোনো প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলে আবারও জিজ্ঞেস করে নেবেন। একদমই চুপ করে থাকবেন না। এতে তারা বিরক্ত হন, ভাবতে বাধ্য হন যে আপনার ভাষা দক্ষতা কম।

নিজের দেশ সম্পর্কে খারাপ কিছু বলবেন না

যদি সাক্ষাৎকারের সময়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কেন বিদেশে শিক্ষা অর্জনে যেতে চাচ্ছেন, তখন কখনোই নিজের দেশকে ছোট করে কোনো উত্তর দেবেন না। অনেকেই বলে থাকেন, দেশের পড়ালেখার মান ভালো না, তাই বাইরের দেশে যেতে চাচ্ছি। এমন উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বরং আপনি বাইরের দেশের কোন কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহবোধ করছেন এবং সেগুলোর সঙ্গে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোন বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে বলুন।

বিচলিত হবেন না 

সাক্ষাৎকারের সময়ে যদি আপনি ভয় পেয়ে যান, সেই ভয় বা অস্থিরতা যদি আপনার চেহারাতে ফুটে ওঠে, তাহলে ভিসা অফিসার সন্দেহ করবে। ভেবে নেবে আপনার মাঝে কোনো ঝামেলা আছে কিংবা কাগজপত্রগুলো নকল। সুতরাং যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। নার্ভাস হওয়া কিংবা ভয় পাওয়া চলবে না।

মুচকি হাসি দিতে পারেন 

অনেক সময়ে ক্রমাগত সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য অফিসারদের মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। তাই যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক ও মুখে মুচকি হাসি রাখার চেষ্টা করবেন। এতে পরিবেশ হালকা হবে, অফিসাররাও হেসে হেসে কথা বলবেন। হালকা মুচকি হাসি আপনার নার্ভাস ভাবটাকে কমিয়ে ফেলে এবং অফিসারের চোখে আপনাকে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করে।

পোশাক কোনো ব্যাপার না

অনেকে মনে করেন, সাক্ষাৎকারের সময় ফরমাল পোশাকের সঙ্গে কোর্ট-টাই পড়া বাধ্যতামূলক, এটিও একটি ভুল ধারণা। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই ভদ্র ও মার্জিত যে কোনো পোশাক পরিধান করলেই হবে। তবে দেখতে কটু কিংবা অশ্লীল কোনো পোশাক পরা অনুচিত। 

সর্বোপরি, একটি সফল সাক্ষাৎকার আপনার ভিসা পাওয়া অনেক সহজ করে দেবে। তাই অংশগ্রহণ করার আগে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে নিন এবং কোন প্রশ্নের উত্তরে কী কী বলবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।