আমরা অনেকেই পত্রিকায় লিখতে চাই। যদিও আমাদের সবারই মোটামুটি লেখার অভ্যাস আছে। কিন্তু পত্রিকায় লেখার কথা শুনলেই মনে হয় এর জন্য বড় মাপের পণ্ডিত হতে হবে। আসলে এটা একদমই নয়। তবে, একটি মানসম্পন্ন লেখা দাঁড় করাতে হলে বেশি বেশি বই ও অন্যের লেখা পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বেশি তথ্য জানার বিকল্প নেই।
যারা পত্রিকায় লেখালেখি করেন তারাও আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ। শুধু পার্থক্য হলো তার চর্চা আছে, আপনার নেই। তবে, শুরু করলে আপনারও চর্চা হবে। জেনে নেওয়া যেতে পারে কিভাবে সহজেই আমাদের লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।
মার্ক টয়েনের ভাষায়, ‘আপনি কখনোই দু’হাত পকেটে রেখে পুরো বিশ্বকে জানাতে পারবেন না।’ অর্থাৎ বিশ্বকে কিছু জানাতে হলে আপনাকে লিখতে হবে। তবেই মানুষ আপনার মনের ভাব জানতে পারবেন। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, তা বুঝতে পারবে।
লেখালেখির অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রতিদিন লিখতে হবে। অন্তত পক্ষে ১০ লাইন লিখতে হবে। আমাদের আশেপাশে যা আছে বা ঘটছে, তাই নিয়ে লেখা শুরু করতে হবে। নিজের ভেতর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশ করতে হলে, নিজেকে আবিষ্কার করতে হলে প্রতিদিন লেখার অভ্যাসের বিকল্প কিছু নেই।
লেখালেখি সম্পর্কে এক লেখকের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমার মধ্যে যে লেখালেখির প্রতিভা আছে, তা আবিষ্কার করতে আমার ১৫ বছর সময় লেগেছিল। আর যখন মানুষ আমাকে লেখক হিসেবে চিনতে শুরু করেছিল, তখন আমি নিজেকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।’ লেখালেখির জন্য সর্বপ্রথম যে কাজগুলো করতে হবে।
সংকোচ দূরীকরণ
লেখালেখি শুরু করার জন্য প্রথমে সংকোচ দূর করতে হবে। এমন যে আমি এটা লিখলে মানুষ কী বলবে, কে কী ভাববে, আমি কি এটা লিখবো? আবার নিজের ভেতরও অনেক সংকোচ তৈরি হয়। যেমন- আমি কি এটা পারবো? প্রথমেই এসব পরিহার করতে হবে। সব পিছুটান, সংকোচ ঝেড়ে ফেলতে হবে। তাই সবার প্রথম নিজের ভেতরের সংকোচ দূর করতে হবে। এজন্য প্রচুর লিখতে হবে।
প্রথমেই পাণ্ডিত্য দেখানোর প্রয়োজন নেই
লেখালেখি এমন নয় যে, কঠিন কঠিন ভাষায় লিখতে হবে। গুরুগম্ভীর ভাব দেখাতে হবে এমন নয়। সহজ-সাবলিল ভাষায় লিখতে হবে। এতে প্রাঞ্জলতা থাকতে হবে। তাই প্রথমেই পাণ্ডিত্য দেখানোর প্রয়োজন নেই।
টপিক ঠিক করতে হবে
আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী বা অনেক ভালো পারেন বা জানেন সেই বিষয়ে লেখা শুরু করতে পারেন। টপিক নির্ধারণ করতে গেলে প্রথমেই এই বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, আপনি যে বিষয়ে অনেক বেশি জানেন, সেই বিষয়ে আগে লিখতে শুরু করতে হবে।
সহজ টপিক নির্বাচন
অনেক সময় আমরা মনে করি, ভাষা অনেক গুরুগম্ভীর বা কঠিন করলেই লেখা ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্রিটিক্যাল বিষয় নিয়ে লিখতে হবে। ব্যাপারটা তা নয়। লেখা হতে হবে সহজ-সরল-সাবলীল।
অনেক বেশি পড়তে হবে
লেখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পড়া। যত বেশি পড়বেন, তত বেশি জানবেন বা শিখবেন, আর তত লিখতে পারবেন। তাই বেশি বেশি পড়তে হবে। সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় পড়ার বিকল্প নেই।
আর যখন যেটা মনে আসবে, তখন সেটাই লিখে ফেলতে হবে। কারণ একই জিনিস পরে সেইভাবে মনে করতে পারি না। আমরা জানি যে এই মহা বিশ্বের প্রতিটি জিনিস একটা-অন্যটার থেকে আলাদা। কারো সঙ্গে কারো মিল নেই। আমরা এখন যা ভাবি, কিছক্ষণ পর সেই একই জিনিস একইভাবে চিন্তা করতে পারি না। প্রত্যেকটা জিনিস, প্রত্যেকটা চিন্তাভাবনা একটা থেকে অন্যটা আলাদা। তাই যখন যা মনে আসবে, তা খাতায় লিখে ফেলতে হবে।
পত্রিকায় লেখালেখি শুরুর জন্য চিঠিপত্র দিয়ে শুরু করা যায়। কেননা, চিঠিতে আপনি যাবতীয় সব কিছুই উল্লেখ করতে পারবেন।
যেসব বিষয়ে লিখতে পারেন
১. ফিচার: কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তার সম্ভাব্য ফলাফল ও সমাধান।
২. কলাম: কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে নিজের মতো একটা সমাধান দাঁড় করানো।
৩. চিঠি: সবকিছু চিঠিতে লেখা যায়।
৪. আন্তজার্তিক বিষয়ে লেখা: যে কোনো আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে লেখা।
৫. সাম্প্রতিক বিষয়: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোনো বিষয়ে লেখা।
৬. ভ্রমণ কাহিনি: কোথাও ঘুরতে গেলে সেই অভিজ্ঞতা ও জায়গা নিয়ে লেখা।
৭. মানবিক বিষয় নিয়ে লেখা। আরও অনেক লেখার বিষয় রয়েছে। তবে নবীনদের জন্য এগুলোই সবচেয়ে ভালো।
এমন বই পড়তে হবে-
যা আমাদের জ্ঞান বাড়ায়। যা চিন্তা, কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি করে। আমাদের শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ক্রিটিক্যাল চিন্তা করার দক্ষতা বাড়ায়। আন্তসম্মানবোধ বাড়ায়। পরনির্ভরতা কমায়। হতাশা দূর করে। এবং কর্মস্পৃহাও বাড়ায়।
এই হলো মোটাদাগে লেখালেখির হাতেখড়ির ধারণা। একবার লেখার অভ্যাস হয়ে গেলে, তখন এমনিই লেখা হয়ে যায়। তখন অনায়াসেই যে কোনো কিছু লিখতে পারা যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।