ক্যাম্পাস

ঈদে নতুন জামা পেলো শিশু সামির

আট বছর বয়সী শিশু সামির। একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তার বাবা নেই। মা দিনমুজুরের কাজ করে। কিন্তু একটানা লকডাউনে তার মা কর্মহীন হয়ে পড়লে রুটি রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। টানাপোড়েনে চলতে থাকে সংসার। তাই এবারের ঈদে নতুন জামা পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল সামির। সে ধরে নিয়েছিল এবার তার নতুন জামা পরা হবে না। পুরনো জামা পরেই ঈদ করতে হবে।

তাইতো চঞ্চল স্বভাবের সামিরের মন খুব বিষণ্ন ছিল। কিন্তু শেষমেশ তার নতুন জামা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেলো। ঈদকে সামনে রেখে সামির পেলো ঈদের নতুন জামা। এখন সে আনন্দে আত্মহারা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সামিরের মতো ১১৪ জন এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুর পাশে দাঁড়ালো নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার একদল উদ্যোমী তরুণ। 

গত ১০ মে সোমবার শহরের গোলাহাট রাজ্জাকিয়া গফুরিয়া মাদ্রাসা মাঠে ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ নামে একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ করেন। এসময় শিশুদের ঈদ সেলামিও দেওয়া হয়। আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের এই ‘ঈদ উপহার বিতরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে সাংবাদিক এম আর আলম ঝন্টু শিশুদের হাতে নতুন পাঞ্জাবি তুলে দেন।

এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোস্তফিজুর রহমান সরকার মুন্না, গোলাহাট রাজ্জাকিয়া গফুরিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকার আনসারী, এসরার আনসারী, নওশাদ আনসারী, সামিউল আলিম, রাজা, সাজুসহ অনেকেই। 

আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের ঈদ উপহার পেয়ে অন্যসব শিশুর মতো কাশফিকেও বেশ উৎফুল্ল দেখা গেলো। নতুন জামা পেয়ে তার কেমন লাগছে জানতে চাইলে ১০ বছর বয়সী শিশু কাশফি বলে, ‘বাবাকে অনেক দিন ধরে নতুন জামা কিনে দিতে বলছিলাম। কিন্তু কিনে দিবো দিবো করে এখনো কিনে দিতে পারেনি। এদিকে আমার বন্ধুরা সবাই নতুন জামাকাপড় কিনে ফেলেছে। আজ পাঞ্জাবি পেলাম। এটা পরে আমি ঈদের নামাজে যাবো।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরের সিনিয়র সদস্য এসরার আনসারী বলেন, ‘প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ঈদের নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও চাঁদ রাতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শতাধিক ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে সেমাই, চিনি, দুধসহ ঈদসামগ্রী প্রদান করা হবে। সেইসঙ্গে ঈদের দিন গরীব ও অসহায় মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো হবে।’

প্রসঙ্গত, মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকার সংকল্প নিয়ে ২০১৪ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি সৈয়দপুরে শিক্ষা, সেবা ও জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি অনলাইন জগতে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সৈয়দপুরের ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক।