ক্যাম্পাস

একজন মনদীপ ঘরাই

বই পড়া মানুষটির নেশা। বই নিয়ে কাজ করতেই তার আনন্দ। গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস - সবই মলাটবন্দি করেছেন মনদীপ ঘরাই তার কলমের আঁচড়ে।

পড়াশোনায় অনাগ্রহ নিয়ে কৈশোর বয়সে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। বইপ্রেমী হয়ে ওঠার শুরুর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বোন বরাবরই ভালো ফলাফল করতো এবং বাবা তাকে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন লেখকের বই উপহার দিতেন। কিন্তু পরের ক্লাসে ভালো ফল করার জন্য সে কখনোই সেই বইগুলো পড়তো না। ফলে আমি সেই বইগুলো পড়তাম, ওই সময় থেকে পড়ার অভ্যসটা তৈরি হয়। 

সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর মনে হলো অল্প করে তো লেখা যেতে পারে। আমার সৃজনশীল লেখার শুরুটা হয় সেই পড়াগুলো দিয়ে। 

উচ্চ মাধ্যমিকে এসে প্রথম বসন্তের ছোঁয়া লাগে। এবং সেই সময় থেকে পাকাপোক্তভাবে লেখালেখির শুরু।আমার মনে হয় প্রকাশ কবে হয়েছে তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কবে থেকে লেখা শুরু করেছি। 

বর্ষা দুপুর প্রকাশনী থেকে তার লেখা প্রথম বই 'অল্প গল্প' প্রকাশ হয়। বই প্রকাশের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, একটা বই যখন মলাটবদ্ধ হয়ে হাতে আসে, সেই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। 

'একটা বই আপনি কিনে রেখে দিলে কোনো লাভ নেই, যতক্ষণ না বইটা পড়ে আপনি তৃপ্ত হচ্ছেন। বইটা পড়ে আপনি কতটুকু সমৃদ্ধ হচ্ছেন। তা নির্ভর করছে আপনি কতটুকু মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়ছেন তার উপর৷ এভাবেই বই পড়া নিয়ে মতামত ব্যক্ত করছিলেন মনদীপ ঘরাই। 

ইতোমধ্যে বই পড়ুয়াদের জন্য গড়ে তুলেছেন একুশ নামের একটি পাঠাগার। তিনি বলেন, অনেকেই দেখা যায় পিডিএফে বই পড়েন৷ তবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ এবং মলাট হাত দিয়ে স্পর্শ করবার যে অনুভূতি, সেটা সেখানে পাওয়া অসম্ভব৷ শুধু পিডিএফ কেন্দ্রিক হলে অনুভূতির জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাই লাইব্রেরি গড়ে তোলার চেষ্টা। 

মনদীপ ঘরাই শরিয়তপুর সদর উপজেলার ইউএনও হিসাবে কর্মরত আছেন। একুশ পাঠাগারের অবস্থান তার সরকারি বাসভবনের একটি অংশে। এই পাঠাগারে রয়েছে বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন বই। পাঠাগারের স্থায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন, আপনি চলে গেলে তো পাঠাগারটা থাকবে না। তাহলে কেন বানালেন? আমি গর্ব করে বলি, থাকার প্রয়োজন নেই। যেখানে মানুষই থাকে না চিরকাল সেখানে একটা উদ্যোগ চিরকাল থাকবে তার মানে নেই। তবে হ্যাঁ যে কাজটা করেছি কেউ তো ভুলবে না। এটাই এখন দরকার। 

শরিয়তপুর গণ-পাঠাগারটি জীর্ন অবস্থায় আছে, খবর পেয়ে সেটি সংস্কারের কাজ করছি। বিভিন্ন ইউনিয়নে একটি কক্ষকে চেষ্টা করছি পাঠাগার করতে৷ এতে গ্রামে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে পারি। 

মনদীপ ঘরাইয়ের প্রিয় লেখক তালিকায় রয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।

লেখালেখির পেছনে তার মা আর স্ত্রীর অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, দাপ্তরিক সময়ের বাইরে বেশি সাপোর্ট আমার স্ত্রীর কাছ থেকে পাই। কারণ আমার যে সময়টা তাকে দেওয়ার কথা, সেটাই আমি লেখার জন্য দেই।

'শেষ পাঁচ দিন' নামে একটি উপন্যাস, 'আর কোনো কপি নেই' নামে আরেকটি বই আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন  'আর কোনো কপি নেই'  বইটির একটিমাত্র কপি প্রকাশ করা হবে, দ্বিতীয় কোনো সংখ্যা থাকবে না বইটির।

লেখালেখি দিয়েই যার এত পরিচয় তার কর্মজীবনের শুরু সংবাদমাধ্যম। পরবর্তীতে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন শরিয়তপুর সদর উপজেলায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফুলবাড়ীয়া রয়েল কলেজ।