চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য ড. শিরীন আক্তার। একসময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন উপাচার্য হিসেবে। ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও উপ উপাচার্যের দায়িত্বেও। গত বছর নভেম্বরে নারীর শিক্ষা, অধিকার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণ এবং পল্লী উন্নয়নে অবদান রাখায় স্বীকৃতিস্বরূপ বেগম রোকেয়া পদকে তিনি ভূষিত হয়েছেন।
সম্প্রতি উপাচার্য ড. শিরিন আক্তারের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন, পড়ালেখা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ (ব্যাচ ২০২০) থেকে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী, ক্যাম্পাস সাংবাদিক এবং তরুণ ফিচার লেখক শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াছিন।
রাইজিংবিডি : বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার সবাই নারী। তবুও শুনি নারীরা পিছিয়ে। তাহলে, নারীর এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় কী এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
-সত্য, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। লক্ষ করবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল নারীকে সমতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে, তাঁর সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব ভার গ্রহণের পর নারীদের সব দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নারীরা আজ সবক্ষেত্রে আছে।
তুমি চিন্তা করো, প্লেন আগেও চালিয়েছেন নারীরা, জেনারেল পর্যন্ত নারীরা কখনো হয়নি, এখন নারীরা জেনারেল হতে পারে। আর্মিতে নারীরা আগে ডাক্তার হয়ে যেতো কিন্তু তারা জেনারেল পদে ঢুকতে পারতো না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েদের সে সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি যে উপাচার্য হতে পেরেছি, এটা বর্তমান সরকার না হলে আমি হতে পারতাম না। নারীরা যে কাজ করতে পারে, বিচক্ষণ হতে পারে, সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, এগুলো আমাদের জনমানুষের কাছে একটু অস্পষ্ট ছিল।
আমি বলছি না সবাই চায় নারীরা পিছিয়ে থাকুক, তা না। আমরা বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করি, এক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, নারী ও পুরুষের সমান ক্ষমতায়ন। নারী পুরুষ যদি একসঙ্গে পা না ফেলেন, তাহলে সমাজ সমানতালে চলতে পারে না। ঘোড়ার গাড়ি যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, তেমন করে চলতে হবে, পিছিয়ে যাবে। আর নারী পুরুষের সমতা বিধান হলে সংসারে শান্তি আসবে, সেটা তিনি বলেছিলেন।
আমাদের এই বাংলাদেশ, আগের পূর্ব বাংলায় নারীরা আসলেই পিছিয়ে ছিল। নারীরা লেখাপড়া করতো না, বাল্যবিবাহ হতো, স্কুলে লেখাপড়া শুরু করলে তারা ঝরে যেতো। পরিবার ভাবতো একটা মেয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে তার প্রতি সমস্ত কর্তব্য শেষ হবে। সেই কারণে তারা বেশিদূর লেখাপড়া করাতো না, তারা নারীকে বোঝা মনে করতো। একটি পরিবারে একটি ছেলে হলে শান্তি মনে করতো। মায়েরা মনে করতো, একটি ছেলে তার সংসারে হলে সবদিক থেকে সুব্যবস্থা হবে, ছেলেরা তাদের ভবিষ্যতে দেখবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন, নারীরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে। শুধু শিক্ষামন্ত্রী, ভিসি পেশায় না, সর্বক্ষেত্রে। মেয়েরা করপোরেট ওয়ার্ল্ডেও দুর্দম, দাপটের সাথে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এক ছাত্রী রুপালী, সে বার্জার প্রতিষ্ঠানে ভালো পদে আছেন এবং তিনি খুব দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আমি বলতে চাই, এখন নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বাংলাদেশ রোল মডেল হয়ে আছে।
নারীদের এগিয়ে যেতে হলে সবার আগে করতে হবে পড়াশোনা। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনা করতো না বলে নারীরা আগে পিছিয়ে থাকতো। এবং আমাদের পরিবারে ছেলেমেয়েকে সমান চোখে দেখতে হবে। আগে ছেলেকে যে যোগ্যতা দিয়ে পড়াশোনা করানো হতো, মেয়েকে সে যোগ্যতায় পড়ানো হতো না, এখন সমান যোগ্যতায় পড়াতে হবে।
নারীরা পিছিয়ে আছে কয়েকটি কারণে, আমরা দেখি যে নারীরা একটি সহিংসতার শিকার হয়। যতই বলি যে সরকার প্রধান, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং স্পিকার নারী বা আমরা নারী হলেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয় না। এটা হলো সামাজিক ব্যাপার। আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে হবে যে এখন সমাজ পরিবির্তনের যুগে নারীদের একটু ভালো চোখে আমাদের দেখতে হবে। এটা পরিবার থেকে শুরু করতে হবে, সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। সব কিছু সরকারের একা করা সম্ভব না। সরকার আদেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে সামাজিকভাবে।
শুধু আমাদের দেশে না, আমাদের প্রতিবেশী দেশেও নারীদের উপর নির্যাতন হয়। আজকাল ভাবতেও অবাক লাগে, শিশু-কিশোর-কিশোরীদের উপরও নির্যাতন হয়। এগুলো বন্ধে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। আর পড়াশোনার বিকল্প নেই আগেই বলেছি।
রাইজিংবিডি : আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষায় নারীর উপস্থিতি কম, এর প্রধান কারণ ও উত্তরণের উপায় কী?
-আমি এটা মানবো না। একটা ঘটনা বলি, প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স স্তরে বিভিন্ন অনুষদে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র-ছাত্রীদের। তিন বছর আগে সেখানে আমি গেয়েছিলাম। সেখানে উচ্চ শিক্ষার বেশির ভাগ পুরস্কার, গোল্ড মেডেল পাচ্ছেন মেয়েরা। আমাদের ইউনিভার্সিটিতেও মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের রেজাল্টই সবসময় ভালো হচ্ছে। পিএইচডি, এমফিলে নারীরা এগিয়ে আছে। আগে থেকে ছেলেরাও কিছু ছিল, সাথে মেয়েরাও আছে। তুমি যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা নাও দেখবে খুব একটা বেশি তফাৎ নেই। কাজেই নারীরা আরও এগোবে।
রাইজিংবিডি : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নারীদের উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহ তৈরিতে কী ভূমিকা রাখছে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কী কী প্রদক্ষেপ নিয়েছে?
-চবিতে প্রতিবছর যে ভর্তি পরীক্ষাগুলো হয়, তাতে নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ করা হয় না। শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করে পরীক্ষা নেওয়া হয় না।
আমাদের নারীকে উচ্চ শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে, তোমাকে তোমার জীবন চিনে নিতে হবে। একটা পুরুষ যেভাবে পড়ালেখা করে সংসারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ভূমিকা রাখবে, নারীকেও সেটা করতে হবে। আমাদের নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আমি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথা বলছি না, মানুষ গড়ার নেতৃত্বের কথা বলছি, তা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যে নেতৃত্বের মাধ্যমে নারীদের মোটিভেটেট করতে হবে, যাতে মেয়েরা মাঝ পথে পড়ালেখা স্টপ করে না দেয়।
রাইজিংবিডি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কীভাবে সহায়তা দিচ্ছে?
-আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। বাস তো সেদিনের ব্যাপার। কোভিড একটা বড় বাধা। আমাদের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের কাছে এটা বড় আঘাত ছিল। আমরা যখন দেখলাম, আমাদের হলগুলো ছেড়ে দিতে হচ্ছে, আমাদের মধ্যবিত্ত ছেলেরা এখানে আসে। তারা আবেদন করলো, তারা ভার্সিটিতে আছে, ভাড়াটা তো বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাদের পক্ষে দেওয়া তো সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কাগজপত্র, বইপত্র রয়ে গেছে, তারা কটেজ ছেড়ে চলে এসেছে কিন্তু মালিকেরা ভাড়া দাবি করছে। আমি তখন মিটিং করলাম, কমিটি করে কটেজের মালিকদের কাছে আবেদন জানালাম আমাদের ছেলে মেয়েরা বাসা ছাড়লে, তাদের হল তো বন্ধ, তারা যাবে কই। তারা তো নেই, তাদের বইপত্র রয়ে গেছে শুধু। মানবিক কারণে তাদের ভাড়াটা কিছুটা কন্সিডার করুন। তারা আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে।
করোনা আসার পর প্রথমে আমরা এই কাজটা করি। এরপরে বিভিন্ন অনুদান দেই। আমাদের কিছু অসচ্ছল ছেলেমেয়ে আছে, তাদের জন্য আমাদের ফান্ড থেকে যতটুকু দরকার সাহায্য করেছি, আর্থিক সহয়তা দিয়েছি। আমরা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি এবং আমি একা নই, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষক তারা নিজস্ব উদ্যোগে নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিয়েছে।
কোভিডের শুরুর প্রথম দিকে যেটা আসলো, আমরা সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়ন, আমাদের কিছু টাকা বেঁচে ছিল, আমাদের শাটল ট্রেনের ভাড়াটা বেঁচেছে, আমাদের বৈদ্যুতিক খরচ কমেছে, তা থেকে ১ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়ে আসি জনগণের জন্য, জনগণের সেবার জন্য। এরপরে আমাদের কাছে একটা অনুরোধ আসলো যে, আমাদের এখানে আইসোলেশন সেন্টার করা হবে। আমরা সেটাও করে ফেলেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় লোকেরা খুবই বাধা দিল বলে এটা বন্ধ রাখতে হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে আমরা ল্যাব করি এবং কোভিড ল্যাবে আমাদের শিক্ষকরা বিনা পয়সায় কাজ করেন, তাদের আমরা কোনো পয়সা দিতে পারিনি। আমরা বিভিন্ন খাত থেকে কিছু টাকা পেয়েছি, কোভিড ল্যাবের খরচ কিন্তু অনেক বেশি। কিছু না করলেও একটা টেস্ট করার জন্য আমাদের প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় কিন্তু আমরা টেস্ট রিপোর্টে কোনো পয়সা নেইনি। যাইহোক, আমাদের কাছে বিভিন্ন নমুনা আসে, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে, এগুলো আমরা টেস্ট করেছি। প্রথমে আমরা সাহস পাইনি করবো বলে। পরবর্তী সময়ে আমাদের শিক্ষকরা যখন সহযোগী হলো, তখন আমরা এটা শুরু করেছি, এখনো তা চালু আছে, আমরা বন্ধ করিনি। এতদিন পরে ইউজিসি আমাদের কিছু অনুদান দেবে বলেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুদান দেয়নি বলে দিতে পারেনি। তখন আমরা নিজেরা চালু রেখেছি, এখন তারা কিছু সাহায্য করছে। আমার কাছে আজকে খবর এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই আমাদের আরটিবিসি টেস্টের ২টা মেশিন ঠিক করে দিচ্ছে।
রাইজিংবিডি : করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চলছে?
-করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আবার আমরা যখন নির্দেশনা পেলাম, তখন ক্লাস শুরু করেছি। ফার্স্ট ইয়ার থেকে ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস শেষ। আমরা এখনো অনলাইন ক্লাসের একটা সিস্টেম রাখবো। হঠাৎ করে ডিজেস্টার যদি আসে, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা পুরোপুরি কিন্তু অনলাইন বাদ দেব না, একটা রাখবো।
রাইজিংবিডি : করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কী ভাবছেন?
-আমরা সবাই, সিন্ডিকেট মেম্বার, একাডেমিক কাউন্সিলররা মিলে ঠিক করেছি ছুটি কমিয়ে দেবো। আমাদের সপ্তাহে শুক্র, শনি দুদিন ছুটি, সব খুলে গেলে আমরা শনিবারের ছুটিটা বন্ধ করে দেবো। আমাদের ওয়ার্কিং আওয়ারটা বাড়িয়ে দেবো। যেমন ৯টা থেকে আড়াইটা আমাদের ক্লাস চলে, ৩টা পর্যন্ত অফিস। আমরা সেখানে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ক্লাস বাধ্যতামূলক করে দেবো। আর আমরা সিলেবাসটা কমিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট আকারে শেষ করতে চাইছি, আমাদের শিক্ষকরা এতে রাজি হলে সেটিও আমরা পদক্ষেপ নেবো।
এভাবে আমরা আমাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবো। সেশনজট যাতে কমাতে পারি, সেটা আমরা ঠিক করবো। পরীক্ষা যখন হয়ে যাচ্ছে, সেশনজট নিয়ে আমি তেমন ভয় পাচ্ছি না। তুমি হয়তো জেনে থাকতে পাবো, স্বাধীনতার পরের সময় দুটো ব্যাচ একসাথে হয়ে গিয়েছিল। করোনাও তো একটা যুদ্ধের মতো গেছে। ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারের কোনো ক্লাস না হলে, বাকি থাকলে সেটা আমরা চেষ্টা করবো কোনোভাবে মিনিমাইজ করা যায় কিনা। আমাদের সবারই একটা সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে। কিন্তু কোনো পরিকল্পনা আমি পর্ষদের সাথে না বসে বলতে পারছি না। আমাদের বিভিন্ন পর্ষদ যেমন সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিলের সাথে কথা বলে আমরা নির্ধারণ করবো ভবিষ্যতে আমরা করোনাকালীন সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে, সেশনজটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা কিভাবে পুষিয়ে নিতে পারি।
রাইজিংবিডি : করোনাকালীন সময়ে চবির গবেষণায় কী কী সাফল্য অর্জন হয়েছে?
-আমাদের ল্যাবে জিনোম সিকুয়েন্সের এমন ভেরিয়েন্ট তারা বের করেছেন, যেটা আফ্রিকা এবং ইন্ডিয়ার সাথে সাদৃশ্য। ২১টি জিনোম সিকুয়েন্স তারা বের করেছে। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু করেছে, আমার কাছে তা এসেছে। যদিও আমি এখনো তাদের রিকগনিশন দিতে পারি নাই।
আর আমাদের শিক্ষকদের গবেষণা থেমে নেই। এরই মধ্যে তারা গবেষণার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। কালকে আমাদের কয়েকজন শিক্ষক ইতালি যাচ্ছেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। উচ্চ শিক্ষার বিষয়টি আমাদের থেমে নেই। আর গবেষণা যেগুলো চলছে করোনা ল্যাব নিয়ে, জিনোম সিকুয়েন্স নিয়ে, তা আমাদের অব্যাহত থাকবে। যতদিন ক্যাম্পাস খুলছে না, ততদিন আমাদের ল্যাব চালু থাকবে। যেহেতু আমাদের আলাদা ফ্যাকাল্টি নেই, আলাদা বিল্ডিং নেই তাই জিনোম সিকুয়েন্সটা চললেও করোনা টেস্ট ল্যাব বাদ দিতে হবে। কারণ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। বায়োলজি ফ্যাকাল্টিতে কাজ শুরু হয়ে গেলে আমরা তখন করোনা টেস্ট বন্ধ করবো, তার আগে করবো না।
রাইজিংবিডি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেল লাইনের সংস্কার কাজের অগ্রগতি কতটুকু?
-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ। রেলমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি যে ট্রেন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা করে দেবেন। করোনার প্রকোপ শেষে ক্যাম্পাস খুললেই নতুন ট্রেন পাওয়া যাবে।
রাইজিংবিডি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
-আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক সূদুরপ্রসারী। আমি জানি না আমি করতে পারবো কিনা। তবে, আমি কিন্তু স্বপ্ন দেখি। খুব স্বপ্নীল মানুষ তো। করোনা না হলে আমার অনেকগুলো কাজ হয়ে যেতো। ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসি আমাকে বলেছিল ১০টা বাস দেবে। আমি থমকে গেছি করোনা জন্য। এখন ওদেরও সমস্যা। ১০টা হয়তো পাবো না, এখন ৫টা বাস দেবে আমাদের ছাত্র শিক্ষকদের জন্য। আমাদের আইটি পার্কটা এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আমাদের কক্সবাজারে ১০ একর জায়গা দিয়েছেন, সেটিতে হবে গোল্ডেন সায়েন্স, বায়োলজি অ্যান্ড ওশানোগ্রাফি ল্যাব। কক্সবাজার ডিসির সাইনটা বাকি আছে, ওটা হয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ সেখানে আমরা এ বছরে ল্যাব করবো।
আমার আরও স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন বলবো না, সত্যিকার রূপান্তরিত হওয়ার পথে আছে। করোনার আগে চায়নার সাথে আমাদের এমওইউ হওয়ার কথা ছিল। তারা ১১তলা একটা বিল্ডিং করে দেবে, যদিও এখন তা ৬ তলা করে দেবে। কনফুসিয়েস সেন্টার এটি করার ইচ্ছে আছে।
আমি একটি মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইরা বলেছিল এটা অনুমোদন পেলে ৫০ কোটি টাকা দেবে। তবে এখন একটা কথা শুনছি। যেহেতু চিটাগং মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অনুমোদন হয়তো দেবে না। সেক্ষেত্রে আমাকে একটা হাসপাতালের অনুমোদন দেবে। আমি সেটাও করে যেতে চাই। আরেকটা ইচ্ছে আছে, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলটাকে ঠিক করে যাবো।
আমরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন স্কুলটার অনেক সুনাম ছিল। আমাদের আত্মীয়স্বজনের ছেলে মেয়ে এখানে পড়তো এবং ভালো স্ট্যান্ড করতো। এখন এটার কিছু খারাপ অবস্থা হয়েছে। করোনার প্রকোপ কমলে এটাতে হাত দেবো। এবং আমাদের যে ঝরনাটা আছে, এতে প্রায় মানুষ মারা যায়। চীনে যেমন হুরাংহো দুঃখ আমাদের তেমন ঝরনাটা দুঃখ। এটাকে শাসন করে এখানকার পানি দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবো। স্বপ্ন এমন অনেক আছে। জানি না কতটুকু করতে পারি, না পারলেও শুরু করে দিয়ে যাবো।
রাইজিংবিডি : বর্তমানে চলমান পরীক্ষাগুলো আর পেছানোর সম্ভাবনা আছে?
-আসলে বলা যাচ্ছে না। এটা আপেক্ষিক হয়ে গেলো। ইনশাআল্লাহ করোনা যদি না বাড়ে তাহলে বন্ধ হবে না। বন্ধ হলে তো শিক্ষার্থীদের আবার এলাকায় এলাকায় পৌঁছে দিতে হবে। গতবার গাড়িগুলো ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। যেসব বাস আমরা দিয়েছি, সাড়ে ১১টায় জানতে পারি পরীক্ষার্থী ছাড়াও অন্য ছাত্ররাসহ বাস পূর্ণ হয়ে গেছে। আমরা রাত ১২টায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে বাস বাড়িয়ে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রদের পৌঁছে দিয়েছি। আমরা যতদূর জানি, করোনার প্রকোপ কমে এসেছে। আমরা পেছাতে চাই না। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই।
রাইজিংবিডি : আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. শিরিন আক্তার : ধন্যবাদ আপনাকেও।