ক্যাম্পাস

বিশ্ব শান্তি দিবসে যা বলছেন শিক্ষার্থীরা 

বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০০২ সালে প্রতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। আর এই দিনই শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। 

২০২১ সালের আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘একটি ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই বিশ্বের জন্য উত্তম উপায় পুনরুদ্ধার’। এ দিবসকে সামনে রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। 

মুক্তি পেতে হলে স্বাবলম্বী হতে হবে

যদি আমরা আজ থেকে পাঁচ যুগ আগের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই, সেই ইতিহানে নারীরা ছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত। কারণ তারা স্বাবলম্বী ছিল না, তারা অক্ষর জ্ঞানহীন ছিল। এখন যুগ আধুনিক হয়েছে, নির্যাতনের মাত্রাটা কমে এসেছে। তবুও নানাভাবে নারীরা নির্যাতিত। নারী প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। 

মানসিক প্রশান্তি এবং সুস্থ-সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে নারীদেরও। শান্তি দিবস উপলক্ষে এ হোক অঙ্গীকার।

জেসমিন খাতুন, শিক্ষার্থী, জাককানইবি 

আদিবাসী নারীদের হাতের কাজে দক্ষতা বাড়াতে হবে

বাংলাদেশে প্রায় ৪৮টি বা আরও বেশি বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তারা প্রায় সময় বিভিন্নভাবে বৈষ্যমের শিকার হন। তাদের বসবাস প্রান্তিক অঞ্চলে হাওয়ায় সরকার বা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাদের সহায়তা তাদের কাছে পৌঁছায় না। বিশেষ করে আদিবাসী নারীরা আরও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা যেন তাদের হাতের কাজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের জন্য বোঝা না হয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। 

প্রবীণ হেনরী ত্রিপুরা, শিক্ষার্থী, জাককানইবি 

নারীর মতামত উপেক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়  

নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ সহিংসতা কেবল ভুক্তভোগীর জন্যই নয়, সমাজের জন্যও ক্ষতিকর। যে শান্তি প্রচেষ্টায় নারীদের কোনো অবদান, ভূমিকা, মতামত, সম্মান ও তাদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আর যাই হোক মুক্তি এবং শান্তির দেখা মেলে না।

তাই সমাজ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করার কোনো বিকল্প নেই। আর এই কাজটিই বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে করে যাচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান পিস ক্যাফে। যেকোনো নারী শিক্ষার্থীর সাথে কোনো ধরনের হয়রানির সংবাদ পেলে উইম্যান পিস ক্যাফে সর্বদা কঠোর ও সোচ্চার ভূমিকা রেখে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও তারা তাদের এসব কাজ অব্যাহত রাখবেন আশা রাখি। 

সাদিয়া বিনতে সিদ্দিক, শিক্ষার্থী, জাককানইবি

শান্তি আনয়নে নারী-পুরুষের সমতা অপরিহার্য

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো নারীরা পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে, যা নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টির কারণ। আমি নিজে ‘আঁরশিলতা’ নামক একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে নিজে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করি ও আমার কাজের মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত করি। উইমেন পিস ক্যাফে এই ধরনের উদ্যোগ তৈরিতে আমার উপর পরোক্ষভাবে মনোবল তৈরি করতে সহায়তা করেছে। 

আমি মনে করি শান্তি আনয়নে নারী-পুরুষের সমতা অপরিহার্য ও নারীর আত্মনির্ভরশীলতাই পারে নারীর ভেতরের ভীতিকে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। শান্তি ও সমতা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। 

ফাইজাহ ওমর তূর্ণা, শিক্ষার্থী, জাককানইবি

বর্তমানে নারী-পুরুষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমানভাবে কাজ করছে 

বাংলাদেশের নারীরা এখন সমাজে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে খুব জোরালোভাবে। সমাজের এই শান্তি আরও বেগবান করতে এবং ধরে রাখতে প্রয়োজন নারী-পুরুষ সমতায়ন। যা ধীরে ধীরে বাংলাদেশে প্রসারিত হচ্ছে, এই প্রক্রিয়াকে আরও প্রসারিত করতে উইমেন পিস ক্যাফে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। উইমেন পিস ক্যাফে বিশ্বাস করে সমাজে শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য সমতা প্রয়োজন, সেই বিশ্বাস থেকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। 

আগামী দিনেও আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস পালনের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবেন আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা এবং একটি টেকসই ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য নারী পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই একটি আলোকিত পৃথিবী দেখবে আগামী প্রজন্ম। 

মেশকাতুল জিনান, শিক্ষার্থী, জাককানইবি