ক্যাম্পাস

জাবির অধিকাংশ হলে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র 

দেশের একমাত্র আবাসিক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, একাডেমিক ভবন ও হলে নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন কোয়ার্টারে অবস্থানরত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগুন সচেতনতায় প্রসাশনের অবহেলা এ জন্য দায়ী। 

হল, নতুন রেজিস্ট্রার ভবন, অন্য অনেক প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, ব্যাচেলর কোয়ার্টারসহ প্রায় সব কোয়ার্টারেই নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। 

এদিকে, আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা নেই হল ও বিভিন্ন ভবনের কেয়ারটেকারদেরও। হলগুলোতে উপস্থিত কর্মচারীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বিষয়টি বলতে পারেননি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সারজিল ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমার দাবি প্রত্যেকটা ভবনে যথেষ্ট অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং অত্যাধুনিক ফায়ার এলার্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক, যেগুলো অতিরিক্ত ধোয়া বা তাপমাত্রার উপস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ সংকেত দিতে সক্ষম। প্রতিটি বিভাগে ৬ মাস অন্তর জরুরি অগ্নিনির্বাপক মহড়ার আয়োজন করা হোক। 

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অনুপস্থিতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণে প্রশাসনের এমন অনীহা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের প্রশাসনের উচিৎ ঢাবির সুফিয়া কামাল হলের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং প্রতিটি আবাসিক হলসহ সব ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শুধু যন্ত্র স্থাপন করলেই হবে না, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাটি পুরোপুরি সচল রাখাও জরুরি।’

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অনুপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে জাবি প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হল এবং একাডেমিক, প্রশাসনিক ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকাটা আসলে দুঃখজনক। আগে তো আগুন নিয়ে এত পরিকল্পনা আমাদের সামনে ছিল না। এখন এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা দ্রুত এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। সব হল ও ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগানো উচিৎ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘আসলে যন্ত্র না থাকায় মহড়া বা প্রশিক্ষণ সম্ভব হয় না। আমাদের প্রধান প্রশাসনিক ভবনেও কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নাই। এগুলো নির্মাণকাজের সময়ের ব্যাপার। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে প্রশ্ন যখন উঠেছে, তখন এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো।’

তবে হাতেগোনা দু’একটা ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ আছে কিনা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য হল কর্মকর্তাদের কাছে নেই বলে দাবি তাদের। শিক্ষার্থীদের ধারণা এগুলো অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৫টি, জহির রায়হান অডিটোরিয়াম ও ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগারসহ হাতেগোনা দু‘একটা ভবনে এমন কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। 

উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হলে প্রায় ১২ হাজার ৯২১ জন শিক্ষার্থীর বসবাস। এখানে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী মিলিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষের আসা-যাওয়া।