ক্যাম্পাস

পাহাড়ি ক্যাম্পাসে শীতের হাতছানি

ষড়ঋতুর দেশে একেক সময় একেক রূপ। কখনো তীব্র তাপদাহে মাঠ চৌচির তো কখনো অঝোর বর্ষণে টইটম্বুর বাংলার বুক চিরে সাপের মতো পেরিয়ে থাকা হাজার হাজার নদ-নদী। ঋতু চক্রের নিয়মে বাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে নব নব সাজে। সেই সাজ বড় বৈচিত্র্যময়, বড় সুন্দর। 

ঋতুচক্রের পালাবদলে শরৎ পেরিয়ে এসেছে হেমন্ত। প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে ভিন্ন রূপ, ভিন্ন আমেজ। ঘাস আর ধানের ডগায় সোনা রোদ লেগে ঝলমল করা শিশির কণা জানান দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খবর। কুয়াশার আবরণে ঢাকা বিস্তৃর্ণ ধানের মাঠ, শিশির ভেজা পথঘাট আর পাখির কলকাকলিতে মুখর বাংলার প্রকৃতিতে বসেছে রঙের মেলা। টুপটাপ শিশির ঝরার শব্দে মৃদু শীতলতা নিয়ে শীতের আগমন ঘটছে পাহাড় ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর সবুজ ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।

ইতোমধ্যে শিশির পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বাতাসেও হিম হিম ভাব। শিশির স্নাত পাহাড়ের গা বেয়ে নামে স্নিগ্ধ সকাল। সকাল হলেই পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে ২১’শ একর। পাহাড়ের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত গাছের পত্র পল্লবে কাঁচা সোনা রোদ মনে হয় যেন মুক্তার দানা। হেমন্তের সকালে ক্যাম্পাসের এমন মোহনীয় স্যৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। কাটা পাহাড় রাস্তা ধরে শহীদ মিনার, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি পেরিয়ে বায়োলজি ফ্যাকাল্টি পুকুর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রকৃতিপ্রেমীদের ডেকে নিয়ে আসে হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে প্রকৃতির রূপ-রস আস্বাদনে। 

হেমন্তের রোদমাখা সৌম্য দুপুর শেষে বিকেলের দিকে ক্যাম্পাসে নামে মানুষের ঢল। আড্ডা, গান আর খুনসুটিতে কাটে বিকেল। গাছের ফাঁক দিয়ে সরু ছুরির মতো বেরিয়ে আসা বিকেলের সোনাঝরা রোদ ছাপিয়ে পুরো প্রকৃতি ঢেকে দেয় কুয়াশার আলোয়ান। মৃদু হিম আর কুয়াশায় মোড়া গোধূলীর অল্প আলো ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে করে তোলে আরও রহস্যময়, আরও মোহনীয়।

হেমন্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তরুণ কবি মোহাম্মদ তাওহিদুল ইসলাম মিশুক বলেন, ‘জীবনানন্দ’ প্রেমীদের মনে হেমন্তের এক অনন্য কদর রয়েছে। কবি জীবনানন্দ দাশ হেমন্তকে ‘ঋতুকন্যা’ নামে বিশেষায়িত করেছিলেন। কার্তিক মাসের আগমনের সূচনা থেকে ‘হেমন্ত’ ধীর গতিতে আপন রূপের পাখা মেলতে শুরু করেছে। হেমন্তের হিম হাওয়া, ভোরের হিমেল হাওয়া মিশ্রিত হালকা কুয়াশা, শেষ বিকেলের পাক ধরা ফসলের সৌন্দর্য এ ঋতুর অনন্য বৈশিষ্ট্য। তবে এসব হেমন্তের শুরুতে সর্বত্র সমভাবে পরিলক্ষিত হয় না। এ রূপের সান্নিধ্য পেতে হলে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে সবুজের সমারোহে, যেখানে প্রকৃতি আপন সময়ে, আপন রূপে নিজেকে মেলে ধরে।

আমাদের প্রিয় চবি ক্যাম্পাস হতে পারে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পুরো ক্যাম্পাস যেনো প্রকৃতির মায়ার চাদরে ঢাকা। ভোরে জিরো পয়েন্ট হয়ে কাটা পাহাড়ের রাস্তায় হাঁটুন, কিংবা বিকেলের সেন্ট্রাল ফিল্ড, সর্বত্র আপনাকে জানান দেবে, ‘আমি হেমন্ত এসে গেলাম।’ রাতের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। রাতের হিমেল প্রকৃতি প্রেমিক হৃদয়, কবি মন বা শিল্পীর কণ্ঠে নব জোয়ারের সৃষ্টি করে। 

শরৎকালের রুক্ষ আবহাওয়ার সাথে সাথে করোনা মহামারির প্রকোপ লাঘব আর হেমন্তের আগমন পুরো ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করে তোলেছে। দীর্ঘদিন পর আপন নীড়ে ফিরে শিক্ষার্থীরা মহা আনন্দিত। তার সাথে হেমন্ত নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ এক অনন্য সম্মেলন। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, আপনার ভালো লাগবেই।

লেখক: শিক্ষাথী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।