ক্যাম্পাস

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের পথচলার গল্প  

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টিকর্ম এবং জীবনদর্শন এ দেশের মানুষের স্মৃতিতে চির অম্লান রাখার লক্ষ্যে তার স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রবিবা নামেও বেশ পরিচিত। ২০১৭ সালে দেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। 

যাত্রাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে) ৩টি বিভাগে ১০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৪টি অনুষদের অধীনে ৫টি বিভাগে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা থেকে কিছুটা দূরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে। স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় স্থানীয় তিনটি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় ক্যাম্পাস সম্পর্কে অনুভূতিগুলো তুলে ধরেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন ইসলাম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা বলেন, স্মৃতিরা সবসময়ই সুন্দর, হয়তো এমনটাই মনের কোণে ভেসে বেড়াবে ক্যাম্পাস জীবন শেষে কোন এক বিষাদময় বিকেলে। তখন হয়তো আনমনে বলে উঠবো সেই সব সোনালি স্মৃতি ও সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা। বিভাগের স্যার, ম্যামের বন্ধুসুলভ আচরণ, সিনিয়র ভাই আপুদের স্নেহ যেন জীবনে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। ক্লাসের ফাঁকে সহপাঠীদের কণ্ঠে হুটহাট ‘বন্ধু চল’ গানে বেসুরে টান, টং দোকানে মামা কড়া লিকার, কম চিনি, বেশি চিনির সাথে টুংটাং শব্দে চলা আমাদের জীবনের গল্প কথনগুলো ছিল বেশ রোমাঞ্চকর।

অর্থনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মুরাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানে নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুত্ব, নতুন যাত্রা। জুয়েল মামার চটপটি, টং দোকানের চা কিংবা খামখেয়ালির পরোটা জিভে জল এনে দেয়। কত স্মৃতিই না আমাদের মনে দাগ কেটে দেয়। সিঁড়িতে বসে আড্ডা, নৌকায় ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে করতোয়া নদীতে গোসল করা, যমুনার পাড়ে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, রেশমবাড়ির স্নিগ্ধতা কিংবা মাছ ধরতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসা এসব স্মৃতি মনকে ব্যাকুল করে। এই ভালো লাগা, এই স্মৃতি ভার্সিটি নামক জায়গায় না আসলে পেতামই না। ক্যাম্পাস এক অন্যরকম ভালো লাগা, ভালোবাসা ও ভালো থাকার জায়গা। 

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন বলেন, ক্যাম্পাস মানে বন্ধুদের হাসি, ঠাট্টা, খুনসুটি, আড্ডায় মেতে ওঠা। ক্যাম্পাস মানে যেখানে যৌবনাদীপ্ত তারুণ্যে পায় অগ্রীম আনন্দ সাগরে ভাসার এক অনাবিল প্রশান্তি। ক্লাসরুমের আড্ডা, বন্ধুদের সাথে সেই মিতালীময় সময়গুলো স্মৃতির মণিকোঠায় জমা হয়ে থাক আজীবন। বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিভার বাতিঘর। যে বাতিঘর থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আলোকিত। যে বাতিঘরের সাক্ষী হতে পেরে আমি ধন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কতশত স্মৃতি জমা পড়েছে। প্রথম যখন এসেছিলাম প্রিয় ক্যাম্পাসে, তখন যেন সবকিছু অচেনা লাগছিল। বন্ধুদের ভিড়ে মন খারাপের মুহূর্তগুলো যেন ডানা মেলে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। ভালোবাসা, আন্তরিকতা, বন্ধুসুলভ শিক্ষকদের ভালোবাসা আমাদের আগলে রেখেছে পুরোটা সময়। স্মৃতির আঙিনায় আমাদের এই তিন বছর পুরো ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে আছে। যা অমলিন ও মধুরও বটে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ ও ভালোবাসার নাম। নতুন হিসেবে এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়ে উঠেনি। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে আমাদের হৈচৈ আনন্দ-উৎসব। প্রথম প্রথম ভালো লাগতো না কিন্তু ধীরে ধীরে এই ক্যাম্পাসই যেন আমার আপন হয়ে ওঠে। 

রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। যদিও স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সব সুযোগ-সুবিধা পাই না, তবুও এই ছোট মফস্বল শহরের অস্থায়ী ক্যম্পাসটাকে ভালোবাসায় আগলে ধরতে পেরেছি।

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।