শীতের সকাল। ছোটবেলায় বাংলা এবং ইলিশে এ নিয়ে রচনা কিংবা অনুচ্ছেদ পড়েনি এমন শিক্ষার্থী পাওয়া হয়তো মুশকিল। কিন্তু মজার বিষয় হলো শীতের সকালের আমেজ উপভোগ করার মতো মানুষ হয়তো অনেক কম। থাকবেই না কেন, শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর গ্রামগুলোতে শহড়ের ছোঁয়া সব মিলিয়ে মানুষের অনুভূতিগুলোও পরিবর্তন হচ্ছে। উত্তরের হিমশীতল হাওয়া, কনকনে ঠাণ্ডা শীতের সকালের মৌলিক উপাদান। কিন্তু গত পাঁচ বছরে আমরা শীতের ঠাণ্ডার মাত্রা শুধু কমতেই দেখেছি।
হ্যাঁ শীত এখনো আছে, ঠাণ্ডায় অনেক শিশু, বৃদ্ধ ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ভুগছে কিন্তু তারপরেও এই শীত যেন আগের মতো নেই। দিন দিন যেভাবে নগরায়ন আর অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা প্রসার হচ্ছে, তাতে হয়তো আমাদের শীত উপভোগ করতে যেতে হবে এন্টার্কটিকায়। খুব অবাস্তব নয় কিন্তু বিষয়টা, কারণ ঢাকা শহরে যখন ৫০ বছর আগেও মানুষ শীতের তীব্রতার প্রভাব বুঝতো, সেখানে বর্তমানে ঢাকায় তাপমাত্রা বাংলাদেশের যেকোনো গ্রামীণ এলাকা থেকে পৌনে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।
উত্তরবঙ্গের শীতের রেকর্ড তাপমাত্রার জেলা পঞ্চগড়েও আর নেই আগের মতো শীতের আবহাওয়া। জেলাতেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের দৃশ্য খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। তবে শীতের প্রকোপ যে নেই, তা নয়। যে দৃশ্যগুলো খুব প্রকাশ্যেই মলীন হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনই যে শুধু এর জন্য দায়ী, তা নয়। পরিকল্পিত নগরায়ন না হওয়া কিংবা যতযত্র অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ নিধন করে অবকাঠামো নির্মাণও এর জন্য দায়ী।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানী কিংবা বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনের বিভিন্ন ভয়ংকর রিপোর্ট তো এখন আলোচনার বিষয়। একবার ভেবে দেখুন তো, আজ যদি আপনি এবং আমি আমার কেক কিংবা বিস্কুট খাওয়ার পর প্যাকেটটি রাস্তায় কিংবা যত্রতত্র না ফেলে একটি নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলি অথবা ডাস্টবিন না পেলে সেটা পকেটে নিয়ে যেখানে ডাস্টবিন পাবো, সেখানে ফেলি, তাহলে বিষয়টা কেমন হবে? আমরা এখন হয়তো ভাববো যে আপনি আর আমি এ দু'জনে এ কাজ করলে কি-ই বা হবে! কিন্তু এটা একবার ও ভাববো না যে আপনি আর আমি ছাড়া আর আছে কে? আজ আমরা এই ছোট্ট একটি কাজে দ্বিধা করি, এমন মানসিকতা পোষণ করছি বলেই দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে।
হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী কাইয়ুম বলেন, আজ থেকে ৬/৭ বছর আগেও শীতকালে শীতের তীব্রতা আরও বেশি ছিল। যখন হাবিপ্রবিতে চান্স পাই, তখন ভাবছি বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি প্রত্যন্ত শহরে। এখানে শীত অনেক বেশি থাকবে। সেই তুলনায় এখন দেখছি শীত নেই। এর জন্য দায়ী আমরা। প্রকৃতি নষ্ট করেছি, প্রকৃতি এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক হাসেম মিয়া বলেন, আগে শীতের দিন এলেই খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতাম। এখন গাছই নেই, রস পাবো কই? অসময়ে ঝড়-বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। অনেক নতুন নতুন সমস্যা বাড়ছে।
এখনো হয়তো ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ কথাটির বিপক্ষের যুক্তিগুলো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি কিন্তু হতে আর দেরি কোথায়? তাই এখন সময় এসেছে পরিবেশের পরম যত্নে বিকশিত হতে দেওয়া। এতে বাঁচবে প্রকৃতি, বাঁচবো আমরা।
লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।