ক্যাম্পাস

ফুলের বাগান যেন তুলির আঁচড়ে আঁকা ক্যানভাস

ভোরের আলো ফুটেছে। সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে বাগানের প্রতিটি গাছের পাতায়। বিচিত্র প্রজাতির বিভিন্ন গাছের প্রতিটি পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু সূর্যের আলোয় যেন মুক্তার মতো ঝলমল করে উঠেছে। সারারাত শিশির সিক্ত হয়ে ভোরের আলো পেতেই মেলে ধরেছে তাদের সৌন্দর্য। 

সুন্দর সাজানো-গোছানো বাগানে খেলা করছে প্রজাপতির দল। চারদিকে বিচিত্র রকমের দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ। কেউ কেউ একটু থেমে গিয়ে দু’চোখ ভরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, কেউবা আবার মুঠোফোনে বাগানের সৌন্দর্য ফ্রেমবন্দি করছেন। এমনই নান্দনিক দৃশ্য চোখে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ রাসেল হল প্রাঙ্গণে। 

হলে ঢুকতেই এমন মোহনীয় দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি ১০১টি প্রজাতির প্রায় ৫ শতাধিক গাছের সমাহার। বিভিন্ন ধরনের ফুলের পাশাপাশি রয়েছে বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ। ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের মধ্যে ইন্ডিয়ান রাচি গাঁদা, গোলাপ, বনসাই, বকফুল, করমচা, জামরুল, পেঁপে, আমলকি, বয়রা, হরিতকী, অর্জুন, তুলসী, এলাচ, ভিয়েতনামি নারিকেল উল্লেখযোগ্য। অল্প সময়ে শত প্রজাতির ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের সমাবেশ হল প্রাঙ্গণের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বাগান নিয়ে উচ্ছ্বসিত।

শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অর্নব হাসান বলেন, হল গেটজুড়েই রয়েছে নানা প্রজাতির ফুলে ঘেরা। যেন কোনো শিল্পির তুলির আঁচড়ে তোলা যত্নের ক্যানভাস। গোলাপ, গাঁদা ফুল, পাতা বাহারী, জবা, এলোভেরা, তুলসিসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছ দিয়েও সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয়েছে পুরো হলের চারপাশ, যা আমাদের মোহিত করে। সারাদিন ক্লাস, ল্যাব, ইনকোর্স শেষে যখন হল গেটে আসি, তখন নিমিষেই যেন সারাদিনের সব ক্লান্তি-অবসাদের মন হঠাৎই প্রশান্তি খুঁজে পায়। হলের চারদিকে ফুলের আভাস আর তার হৃদয়গ্রাহী সুবাস, যে কাউকেই বিমোহিত করতে বাধ্য।

হলের শাখা কর্মকর্তা সুজল কুমার অধিকারী বলেন, বাগান নিয়ে কাজ করা এখানেই আমার প্রথম নয়। হল প্রশাসনের সহায়তায় এখানে শতাধিক প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ লাগিয়েছি। সেইসঙ্গে বাগানের রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে সাথে নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেগা প্রকল্পের আওতায় হল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হবার পর বাগানের সৌন্দর্য বহুরূপে বৃদ্ধির পরিকল্পনা হল প্রশাসনের রয়েছে।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন বলেন, বর্তমান বাগানের অংশে কনস্ট্রাকশনের ইট, বালু, পাথর বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। কিভাবে এটাকে নান্দনিক করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলাম। আমরা ইট বালু পাথর ইত্যাদি অপসারণ করে বাগানটি গড়ে তুলেছি। এখানে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীরা যাতে এই সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি পেতে পারেন। 

এখানে ভিন্ন প্রজাতির ঔষধি ও ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। সেইসঙ্গে বাগানের সাথেই মনোরম পরিবেশে খেলাধুলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু আবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইট-পাথরের অবকাঠামোর সাথে নান্দনিক সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করাই আমাদের উদ্দেশ্য, বলেন প্রভোস্ট। 

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।