ক্যাম্পাস

ক্লাসে ফিরতে শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান, দাবিতে অনড় চবি চারুকলা শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো সংস্কারে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিলেও মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিকাল ৩টার দিকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

এসময় সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘যৌক্তিক দাবি’ পূরণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চারুকলার সংস্কারে সাধ্যমত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পরিবেশ উন্নত করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষার্থীদের রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে নগরীর বর্তমান ক্যাম্পাসে ক্লাস করার আহ্বান জানান। তবে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের নগরীর ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে রাজি নয় বলে জানান।

মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন মাস ধরে চলা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

২০১০ সালের আগে নগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই চারুকলা বিভাগের কার্যক্রম চলত। পরে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের সরকারি চারুকলা কলেজ ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে একীভূত হয় এবং চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে সেখানেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার আন্দোলনে নেমেছে।

শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে ইট-সিমেন্ট খসে পড়ায় গত ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা ২২ দফা দাবি জানায়। দাবি আদায়ে সাড়া না পেয়ে তারা এক দফা অর্থাৎ চবি ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বাদশা মিয়া সড়কের ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা দিয়ে ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন শুরু করে। এরপর প্রায় ৮১ দিন পেরিয়ে গেছে।

শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চবি উপাচার্য শিরীন আখতার, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চবি উপ উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং চারুকলার ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ, মানসম্মত আবাসনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দেন। ক্যাম্পাস এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

পরে বৈঠক শেষে বেলা ৩টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ইনস্টিটিউটে গিয়ে তালা খুলে দেন। তারা সেখানেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রোববার থেকে চারুকলার বাদশা মিঞা রোডের ওই ক্যাম্পাসে ক্লাস করার আহ্বান জানান।

এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ আমরা আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো মন দিয়ে শুনেছি। তাদের যেসব যৌক্তিক দাবি আছে সেগুলো পূরণে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়- সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। এবং সবশেষে ইনস্টিটিউটে এসে সেটি খুলে দিয়েছি।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘রোববার থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। আর শিক্ষার্থীদের সমস্যা যেমন যাতায়াত ও আবাসন ব্যবস্থার সমস্যা নিরসন করা হবে। আর অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৌশলী পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীও থাকবে। ইনস্টিটিউটের সংস্কার করা হবে।’

তবে শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ইনস্টিটিউট ছেড়ে যাবার পর বিকেলে মানববন্ধন করেন ছাত্রছাত্রীরা। তাদের দাবি মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়া।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম মো. শহীদ বলেন, ‘সার্কিট হাউজের বৈঠকে আমাদের ১২ বছরের সংকটের কথা আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের ২২ দফা দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করেছেন নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তারা বলছেন বাজেট স্বল্পতার কারণে এখন কিছু করা সম্ভব না। আমাদের তারা ক্লাসে ফিরতে বলেছেন। তখন আমরা বলেছি, এখানকার একাডেমিক ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। কোথায় ক্লাস করব? তখন তারা বলেছেন, ইনস্টিটিউটের অন্য জায়গাতেও ক্লাস করা সম্ভব। এর প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি সেটা মূল ক্যাম্পাসেও সম্ভব। তাই আমরা সেখানে ফিরতে চাই।’