ক্যাম্পাস

‘এবার সেহরিতে ডেকে তোলার জন্য মা নেই’

‘পরিবারের বাইরে এটাই আমার প্রথম রমজান। পড়াশোনার জন্য পরিবার ছেড়ে বহু দূরে থাকতে হচ্ছে। তবে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদও পাচ্ছি। বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার আয়োজন করা, নিজে সেহরি রান্না করা, এসব জীবনে একদম নতুন অভিজ্ঞতা। যদিও প্রথমবার সব সামলাতে কষ্ট হচ্ছে, তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আগে ঘুম ঘুম চোখে সেহরিতে উঠে কোনোরকম খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যেতাম। যা এখন সম্ভব হয় না।’

এমনটাই বলছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিনুর ইসলাম। ভৈরবের এই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি ছাত্রীনিবাসে থেকে পড়াশোনা করছেন। শুধু মাহিনুর নয়, এমন হাজারো শিক্ষার্থী পড়াশোনার তাগিদে পরিবার ছেড়ে দূরে আছেন। কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

রমজান এলেই ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। ইফতারের সময়টা পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। কে কোন বিভাগ, কে কোন বর্ষ, সেসবের ভেদাভেদ থাকে না। সারাদিন রোজা রাখার পর ক্যাম্পাসের বন্ধু, ভাই-বোনদের সঙ্গে ইফতার করার মুহূর্ত যেন কিছুটা হলেও ভুলিয়ে রাখে পরিবারের শূন্যতা। তবে কোনোকিছুর বিনিময়ে এ শূন্যতাকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব না। 

যশোর থেকে এসে মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন তাহমিদ হাসান। আইন বিভাগের এই নবীন শিক্ষার্থী বলেন, “রমজান শুরু হতো সেহরিতে মায়ের ডাক শুনে চোখ মুছতে মুছতে ‘জলদি খেয়ে নে, বেশি সময় নাই’ শুনে। তবে এবারের রমজানে ডেকে তোলার জন্য মা নেই। রমজানে পরিবার ছেড়ে দূরে থাকাটা কষ্টকর। এবারের রমজানটা ভিন্ন ধরনের।”

ইংরেজি বিভাগের মাশফিয়া তাবাসসুম মায়িশার বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি বলেন, ‘অনেকেরই পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে কিন্তু পবিত্র রমজান মাসের রোজা তো পালন করতেই হবে। ক্যাম্পাসে আলাদা একটা পরিবার পেয়েছি। এখানে সবার সঙ্গে থাকলে পরিবারের অভাবটা কেউ কাউকে বুঝতে দেয় না। রমজান মাসের নতুন কার্যক্রম অনুযায়ী ক্লাসের সময়সূচি কিছুটা দেরিতে হওয়ায় দিনের প্রায় অর্ধেক সময় পার হয়ে যায় ক্যাম্পাসেই। বিকেলে সবার সঙ্গে বসে ইফতার করা হয়। এটাই পরিবারের সেই শূন্যস্থানে জায়গা করে নিয়েছে।’

পরিবারকে মিস করার পাশাপাশি অনেকেই অধীর আগ্রহে আছেন কবে ক্যাম্পাসের পাট চুকিয়ে ঘরে ফিরবেন। ছুটি পেলেই যেন পাখির মতো ছুটে যাবেন বাড়িতে। তাদের মনে বিরাজ করছে বাড়ি ফেরার আনন্দের চাপা উত্তেজনা।

শিগগির বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম আল হাসান। তিনি বলেন, ‘মায়ের হাতের রান্না খুবই মিস করি। খুব দ্রুতই ক্যাম্পাসের কোলাহল পেরিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে ফিরব।’

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।