ক্যাম্পাস

পা দিয়ে লিখে ভর্তি পরীক্ষা, আলেম হওয়ার স্বপ্ন হাবিবুরের

জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। জন্মগত এই প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে নিয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আঙিনায় ভর্তিচ্ছু হাবিবুর রহমান। বাঁ পায়ে লিখে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে স্বপ্নবাজ এই তরুণ। ভবিষ্যতে আলেম হওয়ার স্বপ্ন তার। হাবিবুর রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার হেমায়েতপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের দ্বিতীয় সন্তান। 

সোমবার (৫ জুন) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব ও ইসলাম শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মানা এই শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের ১০৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন এই শিক্ষার্থী। 

হাবিবুর রহমান এলাকার মাদ্রাসা থেকে ২০২০ সালে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ এবং ২০২৩ সালে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এই স্বপ্নবাজ তরুণের সঙ্গে কথা রাইজিংবিডির। রাইজিংবিডি প্রতিনিধিকে হাবিবুর রহমান জানান, বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই তাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে। স্কুল, কলেজ কোনো জায়গায় কখনো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়নি। সবাই তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। 

স্বপ্নযোদ্ধা এই তরুণ বলেন, আমার আলিম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই সবাই বলেছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে। সঙ্গে আমারও ইচ্ছে ছিল। ভবিষ্যতে আমি বড় আলেম হতে চাই।

শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে হাবিবুর বলেন, আমার মতো যারা এরকম নানা সমস্যার সম্মুখীন তাদেরকে এটা বলতে চাই যে, হীনমন্যতায় ভােগা যাবে না। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা না করলে কোনো কিছুই সম্ভব না। চেষ্টা করলে মানুষ অনেক কিছুই পায়। কষ্ট হবে, বিপদ আসবে, সংগ্রামের সঙ্গে এটিকে জয় করতে হবে।

পড়াশোনা করতে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে পা দিয়ে লিখতে সমস্যা হয়। কলম পড়ে যায়।

পরীক্ষার হলে স্যার-ম্যামরা অনেক সহযোগিতা করেছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমি সেট কোড লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম, পরে ম্যাম আমার সেট কোডটি লিখে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ইবি কেন্দ্রে আসা হাবিবুর রহমানের দূরসম্পর্কের এক কাকা আজমাল হোসেন জানান, হাবিবুর যে এতদূর এগিয়েছে, এতে এলাকার লোকও খুশি, আমরাও খুশি। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। 

পরীক্ষা কক্ষের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল বলেন, ছেলেটি একজন অদম্য জীবনযোদ্ধা। আমরা পরীক্ষা হলে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি।