আমরা যারা ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেছি, তাদের জীবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই প্রথম যেখানে ভোট দিতে পারবো। আমাদের জন্মগ্রহণের পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। তখন সবে আমরা স্কুলের দরজায় পা দিয়েছি। তখন নানা জল্পনা-কল্পনা ছিলো নির্বাচনকে ঘিরে।
সেবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। তা নিয়ে আমাদের অবশ্য মাথাব্যাথা ছিলো না। আমরা দলবেধে পোস্টার, লিফলেট সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের মধ্যে তখন প্রতিযোগীতা ছিলো, কে কত বেশি পোস্টার-লিফলেট সংগ্রহ করতে পারি এই নিয়ে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বৃহত্তর দলগুলোর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, স্লোগান আমাদেরকেও প্রভাবিত আংশিক করেছিলো। আমরাও স্কুলে এসব স্লোগান দিতাম আর শিক্ষকদের বকুনি খেতাম। এলাকাতেও গালমন্দ শুনতে হতো স্লোগান মিশ্রণের ফলে। কোন দলের স্লোগান, কোন দলে যে মিশাতাম তা তখন বুঝতামই না একদম।
এরপর ২০১৪ সালে আসে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে মোটামুটি ভালো একটা ধারণা হয়। যদিও তা প্রাথমিক পর্যায়েই। চারিদিকে হরতাল, ভাঙচুর, আগুন-সন্ত্রাস এসবের ভীড়ে আমাদের কোমল মনে তখন নির্বাচন সম্পর্কে এই ধারণা জন্ম নিয়েছিলো। সেটা হলো- নির্বাচন, রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি এগুলো ভালো জিনিস নয়। এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
আমরা যারা রাজনৈতিক পরিবারের বাইরে, তারা রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে একটা বিরুপ ধারণা লালন করতে শুরু করলাম। সেবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আমাদের বয়স তখন আঠারো ছুঁই ছুঁই৷ অল্পের জন্য প্রচলিত আইনে ভোটার হতে পারিনি। তবে আমাদের রাজনৈতিক ধারণাগুলোর পরিবর্তন হয়েছিলো৷
যতটুকু বুঝেছিলাম, রাজনীতি রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাবস্থা, যা দ্বারা রাষ্ট্র, নাগরিক ও ইহাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। যেখানে রাষ্ট্র ও নাগরিক জড়িত, আমরা তো এর বাইরে নই। তাই আমাদের মনেও প্রবল আকারে রাজনৈতিক জ্ঞানপিপাসা বাসা বাঁধতে থাকে৷ এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতা ধরে রাখে।
আমাদের বয়স এখন আঠারো থেকে বাইশের মধ্যে। সংবিধান অনুসারে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের প্রথম কোনো জাতীয় নির্বাচন, যেখানে আমরা ভোট দিতে চলেছি। প্রার্থী বাছাই, ক্ষমতার অতীত-বর্তমান, দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছুই এখন আমাদের ভাবনার বিষয় বস্তু।
আমাদের শৈশবের সেই লিফলেট, পোস্টার জমানো বন্ধু মহলের অধিকাংশ আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে শুদ্ধ স্লোগান দিচ্ছে, নিরলসভাবে করে চলে চলেছে নিজ সমর্থিত ব্যক্তির প্রচারণা। আর একাংশ প্রহর গুনছে জীবনের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানের আনন্দ উপভোগ করতে।
দল-মত নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেকেরই স্বপ্ন শান্তিপূর্ণ, দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত বাংলাদেশের। সবার শুভ চিন্তায় দ্বাদশের ক্ষমতায় যারাই আসবেন, তাদের কাছেই আমাদের চাওয়া স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।