নভেম্বর শেষে ডিসেম্বরের শুরুতে শীতের হিমেল হাওয়া অনেকটা ভালোই বয়েছে। এ শীতকালকে ঘিরেই বাঙালির নানারকম আয়োজন। শীত মানেই পিঠা খাওয়ার ধুম। বিশেষ করে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা না খেয়ে বাঙালি যেন শীতকে বিদায় জানাতেই পারে না। একটা সময় শুধু গ্রাম-বাংলায় হলেও বর্তমানে শহর অঞ্চলেও জায়গা করে নিয়েছে জনপ্রিয় এ উৎসব।
শীতের এ আমেজকে বরণ করে নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবি) কোনো রকম ভুল করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র (টিএসসিসি) চত্বরে এ উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। যা চলবে শীতের শেষ পর্যন্ত।
ক্যাম্পাসের টিএসসিসিতে পিঠার দোকান পরিচালনা করেন মাছুম আলী। তার দোকানে প্রতিনিয়ত ১৩টি চুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ১৮ থেকে ২০ জন কর্মচারী। তারমধ্যে অধিকাংশ রয়েছেন নারী। দিনে তার আয় হয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বিকেল ৪টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে তার দোকান।
তার কাছে পাওয়া যায় পাঁচ রকমের পিঠা। এর মধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, তেল পিঠা, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা। নানা রকম পিঠার সঙ্গে রয়েছে সাত ধরনের ভর্তা। যেমন- বেগুনের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা, ধনিয়া পাতা, কালোজিরা ও কাঁচা মরিচের ভর্তা। এসব প্লেট ও বাটিতে সাঁজিয়ে ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন তারা।
প্রতি পিস স্পেশাল ভাপা ২০ টাকা, নরমাল ভাপা ১০, চিতই পিঠা ১০টাকা, পুলি পিঠা ৮ টাকা, বিভিন্ন ধরনের তেলের পিঠা ১৫ টাকা ও পাঠি সাপটা ১৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে সাত রকমের ভর্তার বিনিময়ে নিচ্ছেন আরও ১০ টাকা।
বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খেতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক নাইমুর রহমান সারুল। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো খুবই সুন্দর। শীতকালে আমাদের ক্যাম্পাসে এই উৎসবটা হয়। কিন্তু দিনের বিবর্তনে এই পিঠা উৎসবের ঐতিহ্যটা হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠার যে গুণগত মান ছিলো এখন আর সেটা তারা ধরে রাখতে পারছে না। তারপরও যে আনন্দ মুখর পরিবেশ হয়ে থাকে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক।
কথা হয় একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী বহ্নি প্রত্যাশার সাথে। তিনি বলেন, এখানকার পিঠাগুলো অনেক ভালো। এখানে ভাপা পিঠা, কুশলি পিঠা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন পিঠা খাওয়ার সুযোগ হচ্ছে।
সাত বছর ধরে পিঠার ব্যবসা করেন মাছুম আলী। তার বাসা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে। তিনি বলেন, কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। তারপর থেকে অন্য কাজ করতে না পেরে পিঠার ব্যবসা বেছে নেই। আগে বসতাস রোকেয়া হলের সামনে। প্রক্টর স্যার গতবার আমাকে ওখান থেকে তুলে টিএসসিসির সামনে জায়গা দিয়েছেন। সাত থেকে আট বছর ধরে আমি এই ব্যবসা করি।
তিনি আরও বলেন, আগে একটি চুলা নিয়ে বসতাম। পরে হলের কাছে ছিলো আমার ২০টি চুলা। এখন স্যার কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। এখন আছে ১৩টি চুলা। আমার বাসার মানুষসহ কর্মচারী আছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন। প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আমার কাছে পাঁচ রকমের পিঠা পাওয়া যায়। সাত রকমের ভর্তা পাওয়া যায়। এছাড়া পাপর পাওয়া যায়।