ক্যাম্পাস

দিনটি ছিল গল্প বলার: মধ্যমণি ‘কৃষ্ণ স্যার’

ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ সরাইলের দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ক্রীড়া শিক্ষক বাবু কৃষ্ণ দুলাল চৌধুরী। ১৯৮৪ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার পরের বছরই কৃষ্ণ স্যারের শিক্ষক জীবন শুরু। একে একে এই বিদ্যাপীঠে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন ৩৮টি বছর।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যখন স্যার আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মজীবন থেকে বিদায় নেন, তখনই আমাদের আফসোস আরও বাড়ে। এমন বিদায়ে আমরাও যদি সাক্ষী থাকতে পারতাম! দেওড়া হাইস্কুলের প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থী স্কুলজীবনে সবচেয়ে বেশি সাহচর্য, সাহস আর উদ্দীপনা পেয়েছেন এই স্যারের কল্যাণেই। 

গুটিকয়েক প্রাক্তন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। যে স্যারের আদর-শাসনে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় কেটেছে, যেসব কথা তখন হয়তো উনাকে বলতে পারেনি; সেসবের জন্য একটি আয়োজন করা যেতে পারে।

সবাই রাজি, কিন্তু তাতেও কিছুটা ‘সমস্যা’ থেকে যায়। কারণ, এত শিক্ষার্থীর সম্মিলন একসাথে ঘটানো অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তখনই আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাবিবুল হক রাজ্জির প্রস্তাব, ‘স্যার সবকিছুর বাইরে স্কুলে স্কাউটদের বেশি সময় দিতেন। প্রত্যেকটা স্কাউট সদস্য স্যারের অতি প্রিয় ও বিশ্বস্ত। আর সংখ্যাটাও খুব বেশি নয়। আমরা প্রাক্তন স্কাউটদের একটি পুনর্মিলনীর আয়োজন করতে পারি। যেখানে মধ্যমণি থাকবেন আমাদের প্রিয় কৃষ্ণ স্যার’।

আইডিয়া দারুণ লাগলো। তাহলে আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হবে, উল্টো প্রশ্ন। তখনই আমরা অনুষ্ঠানের শিরোনাম নির্ধারণ করলাম ‘আজ গল্প বলার দিন’। কারণ, স্যারকে কেন্দ্র করেই যেহেতু আয়োজন আবর্তিত; সেখানে শুধু স্মৃতিচারণ থাকুক। এরপরই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই আয়োজন সম্পন্নের যাত্রা। যা সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিদ্যালয়স্থ হলরুমে সফলভাবে আয়োজিত হয়। 

আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী সজীব। আর মধ্যমণি ছিলেন স্কুলের প্রাক্তন ক্রীড়া শিক্ষক বাবু কৃষ্ণ দুলাল চৌধুরী। এ সময় শতাধিক প্রাক্তন স্কাউট সদস্যদের উপস্থিতিতে কৃষ্ণ দুলাল চৌধুরীকে সংবর্ধিত করা হয়। 

হাবিবুল হক রাজ্জির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাজী টুলস’র সিইও আরমান খাঁন জুনেল, দ্য এশিয়ান এইজ’র প্রতিবেদক মোহন লাল, রাইজিংবিডি ডটকম’র জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক নাজমুল হোসেন ও মনিরুজাম্মান মনির। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শেখ বরকত উল্লাহ স্বাধীন, রাহিম চৌধুরী, আরাফাত, তৌহিদ, সৌরভ প্রমুখ। 

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং দাঁড়িয়ে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক প্রয়াত নুরুল করীম মিলন ও প্রাক্তন স্কাউট সদস্য প্রয়াত মাহবুবের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ, স্কুলের দুরন্ত সময়, শিক্ষকদের আদর-স্নেহ, জীবন গড়ার পেছনে স্কুলের অবদান আলোচনায় উঠে আসে। আনন্দ-আড্ডা-খোশগল্পে ভিন্ন আবেশে মেতে উঠেন সবাই। প্রত্যেকেই নিজের অভিব্যক্তিতে তুলে ধরেছেন স্কুলজীবনের অজস্র গল্প। এরপর বাবু কৃষ্ণ দুলাল চৌধুরীকে সমবেতভাবে সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, স্মারক ব্যাচ ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষক জীবনের ইতি টানার প্রায় এক বছর পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্মাননা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। 

এতে সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন আশিষ দাস, মমীতুজ্জামান শশী, আতাহার উদ্দিন আমরিন, রাহুল দাস, শুভ চৌধুরী, হৃদয় হক, মোরসালিন রহমান, হাসিন চৌধুরী, রিমন হোসেন প্রমুখ। সবশেষে বৃক্ষরোপণ ও ফটোসেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।